প্রতীকী ছবি
গত পৌনে দু’বছর ধরে অতিমারির ঝড়-ঝাপটা সামলে দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বহু ক্ষেত্রেই। কিন্তু সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া এখনও যথেষ্ট শক্তপোক্ত হয়ে ওঠেনি বলে দাবি করা হল মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার রিপোর্টে। বিশেষত গত অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠি ইতিবাচক হলেও, করোনার তৃতীয় ঢেউ সেগুলিকে ফের কিছুটা অস্থির করে তুলেছে। যার ফলে আগামী ঋণনীতিতেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে বলে মনে করছে ইক্রা।
এই অবস্থায় স্টেট ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সৌম্যকান্তি ঘোষের পরামর্শ, রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনার থেকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আর্থিক ভাবে পোক্ত করার দিকেই বেশি জোর দিক সরকার। চলতি অর্থবর্ষে যে রাজকোষ ঘাটতি তৈরি হবে, পরের বছরে সেই তুলনায় ৩০-৪০ বেসিস পয়েন্টের বেশি কমানোর দিকে আপাতত জোর না দেওয়াই ভাল। তা করা হোক ধীরে সুস্থে। সম্পদ করের মতো নতুন কোনও কর চাপালে উল্টে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। বরং এ বছরের শেষে বাজারে এলআইসির শেয়ার আনা গেলে পরের অর্থবর্ষ শুরুর আগে অনেকটা পুঁজি থাকবে সরকারের হাতে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৮.৪% বৃদ্ধির মুখ দেখেছিল দেশ। ইক্রার রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সেই হার ৬%-৬.৫% হয়ে থাকতে পারে। সংখ্যার নিরিখে এই হারকে যেমনই দেখাক না কেন, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে ব্যাপকতর। আবার উদ্বেগের বিষয় হল, ডিসেম্বরেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র যে যথেষ্ট ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তা স্পষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সূচকে। আর করোনার তৃতীয় ঢেউ সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, ‘‘করোনার তৃতীয় ঢেউ আটকাতে রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন বিধিনিষেধ চালু করতে হয়েছে। গত কয়েক মাসে অর্থনীতি যে গতি পেয়েছিল প্রত্যাশিত ভাবেই তা বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে তার শক্তপোক্ত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া ফের পিছিয়ে গিয়েছে।’’
উদাহরণ হিসেবে ইক্রা জানিয়েছে, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি মাপকাঠির মধ্যে ১০টিতে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে উন্নতি দেখা গিয়েছিল। অথচ গত অক্টোবরের সঙ্গে তুলনা টানলে দেখা যাচ্ছে ন’টি মাপকাঠি রয়েছে নড়বড়ে অবস্থায়। বিধিনিষেধের ফলে জানুয়ারিতে সেগুলি আরও দুর্বল হতে পারে। প্রথম দু’সপ্তাহেই সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে। কমেছে ই-ওয়ে বিল, পেট্রল-ডিজ়েলের বিক্রি।