আলাপ: মোদীর সঙ্গে শিল্পপতিরা। সোমবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাজেট। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশে নামার পরে মঙ্গলবার চলতি অর্থবর্ষের জিডিপি নিয়ে প্রথম আগাম অনুমান প্রকাশিত হতে চলেছে। তটস্থ অর্থ মন্ত্রক। কারণ এই অনুমানের উপরেই রাজকোষ ঘাটতি, বাজেট বরাদ্দ থেকে কোথায় কতখানি খরচ কাটছাঁট করতে হবে, তা নির্ভর করবে। এই অবস্থায় সোমবার দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হাজির ছিলেন মুকেশ অম্বানী, রতন টাটা, সুনীল ভারতী মিত্তল, গৌতম আদানি, অনিল আগরওয়াল, আনন্দ মহীন্দ্রা থেকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন, টিভিএস চেয়ারম্যান বেণু শ্রীনিবাসন, এল অ্যান্ড টি-র প্রধান এ এম নাইক। সরকারি সূত্রের খবর, কথা হয়েছে মূলত বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান নিয়ে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আর কী কী করা দরকার, তা নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন শিল্পপতিরা।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হালে নানা পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। কর্পোরেট কর কমিয়েছে। পরিকাঠামোয় বড় মাপের লগ্নি, গাড়ি ও আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে নানা সুবিধা, ব্যাঙ্কে নতুন পুঁজি জোগানো, ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিশিয়ে ৪টি তৈরির মতো সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা বাড়েনি। ঝিমুনি কাটেনি অর্থনীতির। শিল্প মহলের লগ্নির ইঙ্গিতও মেলেনি।
শিল্প মহলের মতে, চাহিদা না-থাকলে নতুন লগ্নি হবে কী করে! আজ মোদী আশ্বাস দেন, সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শিল্পের পাশে থাকবে। যাতে দেশের প্রতিটি কোণে ব্যবসা ছড়াতে পারেন তাঁরা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অর্থনীতির বহরকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া শুধুই একটা অধ্যায়। আমাদের লক্ষ্য আরও বড়।’’
যদিও প্রশ্ন হল, বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে থাকলে সেই লক্ষ্য ছোঁয়া যাবে কী করে? অক্টোবর-ডিসেম্বরে যেখানে তার আরও নামার আশঙ্কা। ফলে গোটা বছরের জিডিপি কোথায় পৌঁছবে, তার অনুমানের অপেক্ষায় অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছেন। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অনুমানে জিডিপি কমলে, তার নিরিখে চলতি অর্থবর্ষের রাজকোষ ঘাটতি, আগামী বছরের বাজেটের অঙ্ক কষতে বসেও সমস্যায় পড়তে হবে অর্থমন্ত্রীকে। কারণ এ বছরের জিডিপি খুবই কম হলে, সেই তুলনায় আগামী বছর আকাশছোঁয়া বৃদ্ধি হবে বলে ধরে নেওয়া কঠিন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অভিযোগ তুলেছিলেন, মোদী জমানায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পও আতঙ্কে। আয়কর দফতর, সিবিআই, ইডি-কে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে। আজ শিল্পপতিদের সঙ্গে নিজের বাসভবনে বৈঠকের পরে দিল্লিতে কির্লোস্কর ব্রাদার্সের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে কার্যত সেই অভিযোগের জবাবেই বলেন, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপকে কর্পোরেট ক্ষেত্রের উপর কেন্দ্রের হামলা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তাঁর আশ্বাস, সরকার এমন আবহ তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে শিল্প নির্ভয়ে কাজ করতে পারে।
আজ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘এই সরকারের আর্থিক নীতি নিয়ে প্রত্যাশা নেই।’’ তাঁর যুক্তি, তেলের দাম বাড়লে সঙ্কট আরও গভীর হবে। সেটা জোঝার পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে খরচে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। চিদম্বরম বলেন, ‘‘কর্পোরেট কর কমিয়েও লগ্নি আসেনি। কেনাকাটা কমেছে। শেষ তিন মাসে খরচ করার টাকাই নেই। এখন স্পষ্ট সরকার দিশাহারা।’’