প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আর্থিক দায় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পরিত্রাণের কোনও উপায় নেই রাজ্য সরকারের হাতে। কারণ, এই টাকা তুলতে হলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। এই মুহূর্তে যেটা মোটেই চাইছে না তারা।
বাধ্য হয়ে তাই বাজারে বন্ড ছেড়ে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বণ্টন সংস্থাকে বাঁচাতে মরিয়া রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু তার জন্য দরকার কেন্দ্রের সাহায্য। তাই বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতার বাইরে গিয়ে কেন্দ্র যাতে রাজ্যকে অতিরিক্ত ৭৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেয়, সেই অনুরোধ জানিয়েছে নবান্ন। কিন্তু আর্জি যাওয়ার পরে কয়েক মাস গড়িয়ে গেলেও বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। তাই অতিরিক্ত ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় অনুমতি পেতে ফের তৎপর হচ্ছে সরকার।
বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির আর্থিক হাল ফেরাতে উজ্জ্বল ডিসকম অ্যাসিয়োরেন্স যোজনা বা ‘উদয়’ প্রকল্প শুরু করেছে বিদ্যুৎ মন্ত্রক। মূল লক্ষ্য, আর্থিক অনটনে ধুঁকতে থাকা বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির বকেয়া ঋণের উপরে কেন্দ্রীয় অনুদান দেওয়া। শর্ত হিসেবে সংস্থাগুলিকে বেশ কিছু সংস্কার করতে হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পে যোগ দেয়নি রাজ্য।
বিদ্যুৎকর্তাদের ধারণা, এখানকার সংস্থাগুলির আর্থিক হাল যে খারাপ, সেটা কেন্দ্রকে দেখাতে চায় না রাজ্য। অনুদান নিলে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে হত। সেটাও চায়নি নবান্ন। সর্বোপরি রয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাতের বিষয়টি। তাই উদয় প্রকল্পে শামিল হয়নি রাজ্য।
কিন্তু আর্থিক দায় ১০ হাজার কোটি ছাড়ানোয় ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে বণ্টন সংস্থার অন্দরে। সংস্থার এক কর্তা জানান, উপায়ান্তর না-দেখে জানুয়ারিতে একটি আর্থিক পুনর্গঠন প্রকল্প (ওয়েস্ট বেঙ্গল পাওয়ার সেক্টর ফিনান্সিয়াল রিস্ট্রাকচারিং স্কিম) তৈরি করে বাজারে বন্ড ছেড়ে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ধার নিয়ে ৭৮০০ কোটি তোলার ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছিল। প্রকল্পে বলা হয়েছে, আট বছরে রাজ্যে তিন বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। অথচ দামি হয়েছে কয়লা। এনটিপিসি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কিন্তু রাজ্যে বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ কেনার খরচ বাড়লেও বিক্রির দাম বাড়েনি। বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতি বছর বিদ্যুতের নতুন দাম ধার্য করতে চাইলেও, রাজ্য তা কার্যকর করেনি। ফলে কমিশন নির্ধারিত বিদ্যুৎ মাসুল ধরলে খাতায়-কলমে তার যা দাম দাঁড়িয়েছে, তা বিপুল বকেয়া হিসেবে পাওনা হয়েছে বণ্টন সংস্থার। কিন্তু সেই টাকা গ্রাহকদের থেকে আদায় করতে হলে রাজ্যে এক ধাক্কায় বিদ্যুতের দাম অনেকটা বাড়াতে হবে। যা তারা চায় না। বিদ্যুৎ কেনার বাড়তি খরচ মেটাতে সংস্থাকে প্রতি মাসে ধারও করতে হচ্ছে। দুইয়ে মিলিয়ে দায় ছুঁয়েছে ১০ হাজার কোটি।
বণ্টন সংস্থার বক্তব্য, কেন্দ্র বাড়তি ঋণ নিতে দিলে তা দিয়ে গ্রাহকদের গত আট বছরের বকেয়া বিদ্যুতের দামে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গ্রাহকদের ঘাড়ে বকেয়া বিদ্যুতের যে-দায় চাপত, তা মকুব হবে। তাই বন্ড বা ঋণ থেকে টাকা পাওয়া জরুরি।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক অবশ্য রাজ্যকে বলেছে, বিদ্যুৎ সংস্থার আর্থিক হাল ভাল থাকলে গ্রাহকদের ভর্তুকি বা ছাড় দেওয়া যায়। কিন্তু অনটনে কাহিল সংস্থার বাজার থেকে টাকা তুলে ভর্তুকি দেওয়া উচিত নয়। তা ছাড়া বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার হিসেব অনুযায়ী গ্রাহকদের কাছে কত টাকা প্রাপ্য, রাজ্য তা জানায়নি। তার পর থেকে সংস্থার পুনরুজ্জীবন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘দিল্লির সঙ্গে ফের কথা শুরু হচ্ছে। আশা, কিছু উপায় বেরোবে।’’