নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা! কোনও সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ নয়। অঙ্কটা রাজ্য সরকারের অন্তত পাঁচটি দফতর এবং বেশ কিছু সরকারি সংস্থার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের।
বুধবার নবান্ন সূত্রের খবর, এই তথ্য সামনে আসার পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী-আমলাদের কিঞ্চিৎ কড়া কথা শুনতে হয়েছে। সম্প্রতি ‘সংস্কারের’ পথে হাঁটা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর যে ওই বিপুল বকেয়া সুনজরে দেখছে না, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভাগীয় কর্তাদের।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে সরকার এবং শাসক দলের সংস্কারকেই যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাধান্য দিচ্ছেন, দিন কয়েক ধরে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। দলীয় কর্মীদের ‘জনসেবক’ হওয়ার কথা বলা বা নবান্নের বৈঠকে পুর-পুলিশ এবং প্রশাসকদের ‘রোজগার’ না বাড়িয়ে ‘কাজ’ করার জন্য বক্রোক্তিতে সেই বার্তা ছিল স্পষ্ট। যে কারণে ফুটপাথে ‘লোক বসিয়ে’ অর্থোপার্জনের অভিযোগে ধমক খেয়েছিলেন রাজ্যের দমকল মন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ বিল-বকেয়া রাখায় বুধবার তেমনই উষ্মার সামনে পড়েন কয়েক জন মন্ত্রী-আমলা। প্রথম সারিতে থাকা ওই দফতরগুলির এমন বিপুল পরিমাণ বকেয়ার কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, ওই তালিকায় শীর্ষে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর। গত কয়েক বছরে তাদের বকেয়া প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন শাখা মিলে নগরোন্নয়ন দফতরের বাকি প্রায় ৩৫০ কোটি। পিছিয়ে নেই পঞ্চায়েত দফতরও, প্রায় ৩২০ কোটি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি এবং পূর্ত দফতরের বিদ্যুতের বিল বাকি রয়েছে যথাক্রমে ১২০ কোটি ও ১১০ কোটি টাকা। তিন থেকে সাত বছরের ওই বকেয়ায় সুদ এবং জরিমানা চাপলে টাকার অঙ্ক কয়েকগুণ বাড়বে।
বকেয়ার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। তবে নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা কবুল করেন, ‘‘বিদ্যুতের অপচয় যে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে তা অস্বীকার করা যায় না।’’ পূর্ত দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘আগে জেলার বিভিন্ন দফতরের বিদ্যুতের বিল মেটাত পূর্ত দফতর। এখন সে দায় ভার বিভিন্ন জেলা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারাই বলতে পারবে বকেয়ার কারণ।’’ এ ব্যাপারে বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক শীর্ষকর্তা জানান, সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাছে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে বিভিন্ন সরকারি দফতরে বিদ্যুতের খরচ কমানোর আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য। নবান্নের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘এই চূড়ান্ত তাপপ্রবাহে তার পরেই বিদ্যুতের অপচয় কমাতে কোমর বেঁধে নামা হয়েছে। তার মধ্যে বকেয়ার খবর সামনে আসায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ তিনি জানান, এ ব্যাপারে সব দফতরেই নবান্নের তরফে নির্দেশ বা অ্যাডভাইজ়ারি পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, বকেয়া বিলের কারণ ও পরিমাণ। নবান্নের খবর, সুদ এবং জরিমানা যাতে বাদ দেওয়া হয়, এই মর্মে সিইএসসি এবং বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে দরবার করতেও বলা হয়েছে ওই দফতরগুলিকে।