—ফাইল চিত্র।
ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার উপরে বিভিন্ন আর্থিক অবরোধ চাপানো শুরু করেছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে আর এত বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি রাশিয়া। এই অবস্থায় তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ব্যাপারে মনোযোগী হল মস্কো। জানাল বিনিয়োগের আবেদন। দিল তেল সরবরাহ আরও বাড়ানোর বার্তা।
সঙ্কটকালে রাশিয়ার এই আগ্রহকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু পশ্চিম দুনিয়া যখন রাশিয়ার উপরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে, তখন ভারতের পক্ষে তাদের হাত আরও শক্ত ভাবে ধরা কতটা নিরাপদ হবে, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তার পরে পাক্কা তিন সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। দু’পক্ষের দফায় দফায় বৈঠকে আশার বার্তা পাওয়া গেলেও বাস্তবের জমিতে পরিস্থিতির উন্নতির কোনও লক্ষণ এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। উল্টে এই সময়ের মধ্যে দফায় দফায় রাশিয়ার উপরে বিভিন্ন আর্থিক অবরোধ চাপিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেনের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশ। চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার তেল আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপায় আমেরিকা। ব্রিটেন জানায়, এ বছরের শেষাশেষি তা পুরোপুরি শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারীর উপরে এই ধরনের অবরোধ চাপানোর অর্থ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া। সে ক্ষেত্রে অশোধিত তেলের দাম আরও বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগ চেয়ে ভারতের তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে বার্তা দিলেন রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আলেকজ়ান্ডার নোভাক। এ দেশে রুশ দূতাবাসের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতে রাশিয়ার তেল ও পেট্রোপণ্যের রফতানি ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এই অঙ্ক আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা আমাদের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ভারতের আরও বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী। আর ভারতে আমাদের পণ্যের বিক্রির পরিকাঠামোও বাড়াতে ইচ্ছুক।’’ ওয়াকিবহাল মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, পশ্চিমের দেশগুলি রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য ভারতকে আবেদন জানালেও এখনও পর্যন্ত দিল্লি তা করেনি। শুধু আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে। আবার উল্টো দিকে আর্থিক অবরোধ বৃদ্ধি হতেই তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে দামে ছাড় দেওয়ার জন্য দিল্লিতে টোপ দিয়ে রেখেছে মস্কো। তবে ভারতের পক্ষে এই ডাকে কতটা সাড়া দেওয়া সম্ভব, তা এখনই বলা যাবে না বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের।
জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। রাশিয়া ভারতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির ভালরকম অংশীদারি রয়েছে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলিতে। এ দেশের নায়ারা এনার্জির শোধনাগারে অংশীদারি রয়েছে রসনেফ্ট-সহ কয়েকটি রুশ সংস্থার। অবরোধের ফলে এই গাঁটছড়াগুলি নড়ে গেলেও দু’দেশের ক্ষতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।