প্রতীকী ছবি
আশঙ্কা ছিল। বিরোধী দলগুলি-সহ সংশ্লিষ্ট মহলও দুষছিল এই বলে যে, রেটিং কমে যাওয়ার ভয়েই আসলে কেন্দ্র ত্রাণ প্যাকেজে সরাসরি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার রাস্তায় হাঁটেনি। যাতে সরকারের খরচ বেড়ে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি আরও মাথা না-তোলে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মূল্যায়নে কোপ সেই পড়লই। খরচ নিয়ে সরকারের সতর্ক পদক্ষেপ সত্ত্বেও। গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১১ বছরের নীচে তলিয়ে যাওয়ার হিসেব সামনে আসার দিন তিনেকের মধ্যেই ভারতের রেটিং এক ধাপ ছেঁটে দিল আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ়। তা ‘Baa2’ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ‘Baa3’।
সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এ বার কী করবে মোদী সরকার? করোনার সঙ্গে লড়াই করে অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে সরাসরি আর্থিক সাহায্য জরুরি জেনেও, ব্যাঙ্কঋণের ঘাড়ে সেই দায় ঠেলে কর্তব্য এড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও রেটিং কমার পরে কি ফের নতুন ত্রাণ ঘোষণার পদক্ষেপ করা হবে? শুধু তা-ই নয়, অনেকেই বলছেন, কেন্দ্র তো বিদেশের মাটিতে বন্ড ছেড়ে ধার নেওয়ার জন্য বড় মাপের পরিকল্পনা করেছে আগেই। দীর্ঘ দু’দশক পরে এই প্রথম ভারতকে ধার দেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে বলে মুডি’জ়ের বার্তায় সেই চেষ্টাও ধাক্কা খাবে না কি?
সোমবার বিদেশি মু্দ্রায় এবং ভারতীয় মুদ্রায় ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি সরকারি বন্ডের রেটিং কমিয়েছে মুডি’জ়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যায়ন কমল ভারতের। দীর্ঘমেয়াদে যে বন্ড ছেড়ে সরকার ধার নেয়, তার রেটিং ‘Baa2’ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ‘Baa3’। অন্য দিকে ভারতীয় মুদ্রায় স্বল্পমেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে ‘P-2‘ থেকে কমে হয়েছে ‘P-3’। বন্ডে লগ্নির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন রেটিং ‘Baa3’। ফলে এ দেশের বন্ডে লগ্নি না-করার সুপারিশ ‘জাঙ্ক’ থেকে এখন এক ধাপ উপরে ভারত।
রেটিং কমিয়ে মুডি’জ়ের বার্তা, ভারতীয় অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে দীর্ঘমেয়াদে নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিপুল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। যা সামাল দেওয়া মুশকিল হতে পারে।
আরও পড়ুন: ফারাক কমেনি বেকারত্বে, চোখ লকডাউন তোলায়
করোনার আবহে রেটিং ছাঁটার পদক্ষেপ করা হলেও, তার কারণ যে অর্থনীতিতে করোনার ধাক্কা নয়, তা-ও স্পষ্ট জানিয়েছে মূল্যায়ন সংস্থাটি। তাদের দাবি, ঝিমুনি ছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে নাগাড়ে। সমস্যা চেপে ক্রমশ চেপে বসেছে আর্থিক ক্ষেত্রে। রাজকোষ ঘাটতি মাথা তুলেছে ইতিমধ্যেই। ফলে এ দেশকে ধার দেওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে অনেক আগেই। করোনা শুধু সেই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমনকি মুডি’জ়ের এটাও দাবি যে, এখন যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছে, আর্থিক ক্ষেত্রের সমস্যাগুলির জেরে ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি আগামী দিনে তার থেকেও অনেক বেশি ক্ষয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু আর্থিক ক্ষেত্রের সমস্যা সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলি কমানোর জন্য ভারতের নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠানের নেওয়া নীতিগুলি কার্যকর করাই কঠিন হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতের সরকারি বন্ডের রেটিং Baa3 থেকে বাড়িয়ে Baa2 করেছিল মুডি’জ়। তখন তাদের আশা ছিল, ভারত আর্থিক ক্ষেত্রে যে সব সংস্কার আনছে, তার সুবাদে ভবিষ্যতে বাজার থেকে ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দেশের যোগ্যতা আরও বাড়বে।