আমজনতার মনে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিজেপি শিবির পাল্টা প্রচারে নামল। ফাইল ছবি
অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সরকার বিদেশি ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। বিদেশি ঋণের বোঝার চাপে এ দেশেও শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে টুইটার-ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরপাক খাচ্ছিল প্রশ্ন। সন্দেহ প্রকাশ করে বিরোধী শিবিরও। এ নিয়ে আমজনতার মনে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিজেপি শিবির পাল্টা প্রচারে নামল। মোদী সরকার তথা বিজেপির দাবি, এমন আশঙ্কার কারণ নেই। চিন্তা নেই বিদেশি ঋণ নিয়েও।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত মার্চের শেষে ভারতের মোট বিদেশি ঋণ ছিল প্রায় ৬২,০৭০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবর্ষে শোধ করতে হবে ২৬,৭০০ কোটি ডলার। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে মজুত প্রায় ৫৮,৮৩১ কোটি ডলার। ফেসবুক-টুইটারে অনেকেই বলছিলেন, ওই ঋণের ৪৩% ন’মাসের মধ্যে মেটাতে হবে। মুদ্রা ভান্ডারের ৪৪% তাতেই চলে যাবে। ফলে ডলারে টাকার দর আরও পড়বে।
মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনের বক্তব্য, ‘‘ভারতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভিত্তিহীন আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ ভারতকে ব্যর্থ দেখতে চায়। এ সবে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই।’’ বিজেপির আইটি সেলের ভারপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালব্যর যুক্তি, ‘‘মোট বিদেশি ঋণ প্রায় ৬২,১০০ কোটি টাকা হতে পারে। কিন্তু অর্ধেকটাই বেসরকারি সংস্থার। সরকারের দেনা মাত্র ২১%। এই অর্থবর্ষে যে ২৬,৭০০ কোটি মেটাতে হবে, তাতেও সরকারের ভাগ ৩ শতাংশেরও কম।’’ সরকারি হিসাবেও দাবি, ৬২,০৭০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণে কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে সরকারি ঋণ ১৩,০৮০ কোটি ডলার। ৩০,৩৫০ কোটিই বেসরকারি সংস্থার খাতায়।
এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রকের বৈঠকে কয়েকজন আমলার অভিযোগ ছিল, ভোটের আগে কিছু রাজ্য যে ভাবে রাজকোষের কথা না ভেবে জনমোহিনী প্রকল্প আনছে, তাতে শ্রীলঙ্কার মতো সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত আমলা, তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকার টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারের অর্ধেকটাই বিদেশি ঋণের সামান্য অংশ শোধ করতে বেরিয়ে যাবে। তারপরে কী হবে? শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদ?’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, ঋণের বোঝা যে গতিতে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো পরিণতি না হয়।’’
অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, প্রাক্তন বিদেশসচিব কানওয়াল সিব্বলের পাল্টা যুক্তি, ‘‘ভারতের বিদেশি ঋণের মাত্রাকে অতিনাটকীয় ভাবে দেখানোর দরকার নেই। তা জিডিপি-র মাত্র ২১%। যেখানে আমেরিকার ১০১%, ব্রিটেনের ৩১৭%, ফ্রান্সের ২৫৬%।’’ মালব্যর দাবি, ‘‘যাঁরা শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদের কল্পনা করছেন, তাঁরা ভুল ভাবে পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন।’’
অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর অবশ্য চিন্তা অন্য জায়গায়। তাঁর বক্তব্য, জীবনযাত্রার মানের নিরিখে শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ‘বিগ সাকসেস স্টোরি’। তা হলে পতনের কারণ কী? তিনি বলেন, ‘‘স্বৈরতন্ত্র, বিভাজনের রাজনীতি, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং চাষিদের প্রতি সহানুভূতি ছাড়াই কৃষি ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর পদক্ষেপের ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, শ্রীলঙ্কার পতনের এই সব কারণই মোদী সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।