অনুৎপাদক সম্পদের জন্য মোটা টাকা (প্রায় ২৭ হাজার কোটি) তুলে রাখতে গিয়ে গোঁত্তা খেল স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফা।
গত অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কটির নিট মুনাফা আগের বারের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৬৬.২৩%। সারা বছরে ২৪.০৫%। ফলে তা ১৩,১০২ কোটি টাকা থেকে নেমে এসেছে ৯,৯৫১ কোটিতে। এসবিআইয়ের দাবি, গত আর্থিক বছরে মোট লাভ বাড়া সত্ত্বেও তাদের নিট মুনাফা ধাক্কা খেয়েছে খেলাপ হওয়া ঋণ খাতে ২৬,৯৮৪ কোটি টাকা তুলে রাখতে গিয়ে।
এই বিপুল অঙ্ক সংস্থানের পরেও কিন্তু অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি স্টেট ব্যাঙ্ক। মোট ঋণের সাপেক্ষে তা বেড়েছে ২২২ বেসিস পয়েন্ট। নিট হিসাবেও আগের বছরের তুলনায় ১৬৯ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৩.৮১%। কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘‘অনুৎপাদক সম্পদে রাশ টানতে প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনুৎপাদক সম্পদ হয়নি কিন্তু ধার শোধে গাফিলতি ধরা পড়েছে, এমন ৩১ হাজার কোটি টাকার ঋণ চিহ্নিত করেছি। চেষ্টা হচ্ছে তাকে অনুৎপাদক সম্পদ হওয়া থেকে আটকানোর।’’
অনুৎপাদক সম্পদ দ্রুত কমাতে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ঋণ যাচাইয়ে গত বছর থেকে চালু করেছে নতুন ব্যবস্থা। অরুন্ধতীদেবীর দাবি, তা চালু হওয়ায়, গত অর্থবর্ষের তৃতীয় ও চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যথাক্রমে বাড়তি ১৪ ও ৯ হাজার কোটি টাকা অনুৎপাদক সম্পদ খাতে রাখতে হয়েছে তাঁদের।
স্টেট ব্যাঙ্ক চেয়ারপার্সনের মতে, অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা কম-বেশি প্রায় সব ব্যাঙ্কেরই। তাঁর পর্যবেক্ষণ কতটা খাঁটি, তা স্পষ্ট শুক্রবার কানাড়া ব্যাঙ্কের প্রকাশিত আর্থিক ফলেও। মার্চ-ত্রৈমাসিকে তাদের নিট লোকসান হয়েছে ৩,৯০৫.৪৯ কোটি টাকা। আয় বাড়া সত্ত্বেও সারা বছরের ক্ষেত্রে তা দাঁড়িয়েছে ২৮১২.৮২ কোটিতে।
সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, সময়ে শোধ না-হওয়া ধারের জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে গিয়ে বিপুল নিট লোকসানের মুখ দেখেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা, ইউকো ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, দেনা ব্যাঙ্ক ইত্যাদি। লাভ কমেছে অন্ধ্র ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কেরও।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির লাফিয়ে বাড়তে থাকা অনুৎপাদক সম্পদ নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। এ নিয়ে আলোচনায় বসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৫ সালে এর অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩.৬১ লক্ষ কোটি টাকা।
অবশ্য সম্প্রতি তারই মধ্যে কিছুটা আশার কথা শুনিয়েছেন রাজন। তাঁর দাবি, অনুৎপাদক সম্পদের চাপে এ দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে না। তিনি মনে করেন, ধীরে হলেও ঘুরতে শুরু করেছে অর্থনীতির চাকা। ভাল বর্ষা হলে তাতে গতি বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ওই বোঝা কিছুটা হাল্কা হতে পারে। কারণ, অর্থনীতির হাল ফিরলে চাহিদা বাড়বে। তাই তখন ব্যাঙ্কের ধারের টাকা শোধ করা সুবিধাজনক হবে সংস্থাগুলির পক্ষে। এ দিন কার্যত একই কথা বলেছেন অরুন্ধতীদেবীও। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে দেশে চাহিদা কম। ফলে থমকে রয়েছে শিল্পের অগ্রগতি। অবস্থা একটু ফিরলে অনুৎপাদক সম্পদের অনেকটাই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের ফলকে স্বাগত জানিয়েছে শেয়ার বাজার। নিট মুনাফায় পতন সত্ত্বেও তাদের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। নিট মুনাফার অঙ্ক মোটামুটি প্রত্যাশার গণ্ডিতে থাকাই এর কারণ বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।