বিশ্ব অর্থনীতি আবারও অনিশ্চয়তার কবলে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অর্থনীতি বেশ ঝিমিয়ে। অর্থনীতির অতিরিক্ত সাহায্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কর্ণধার মারিয়ো দ্রাঘি। এই অবস্থায় আশা করা হয়েছিল কিছুটা হয়তো সুদ কমাবে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু তা হয়নি। তবে আগামী দিনে তা কমানোর পথ খোলা বলে জানিয়েছে তারা। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলেছে, চলতি বছরেই সুদের হার কমানো হতে পারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। এ দিকে এরই মধ্যে ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্ক টানা তিন বার মোট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। এতেও সমস্যার সুরাহা বিশেষ হয়নি। অর্থনীতির গতি বিশেষ বাড়েনি। তাই শিল্প মহলের দাবি, রেপো রেট (যে হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়) আরও কমানো হোক।
এই অবস্থায় সুদ কমবে তা প্রায় ধরে নিয়েই বিশ্বে কমতে শুরু করেছে বন্ড ইল্ড বা বন্ডের উপর প্রকৃত আয়। ইল্ড কমে বন্ডের বাজার দর বাড়লে, তা বন্ড ফান্ডের জন্য ভাল। ভারতেই ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড নেমে এসেছে ৬.৮৬ শতাংশে, যা কয়েক মাস আগেও ছিল ৮ শতাংশের উপরে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, যে সমস্ত ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার সরকারি বন্ড ইল্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাদের সুদ ১ জুলাই থেকে কমানো হতে পারে। সুদ নির্ভর মানুষের কাছে এই বার্তা অবশ্যই সুখকর নয়। জমার উপরে সুদের হার ইতিমধ্যেই কিছুটা কমিয়েছে কয়েকটি গৃহঋণ সংস্থাও।
সমস্যা এখানেই থেমে নেই। আশঙ্কা, বর্ষা এ বার ভোগাবে ভারতকে। একে বৃষ্টি এসেছে দেরিতে। তার উপরে গত সপ্তাহ পর্যন্ত তা স্বাভাবিকের তুলনায় হয়েছে প্রায় ৪৩% কম। এর প্রভাব পড়বে কৃষি উৎপাদনে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। ধাক্কা খেতে পারে গ্রামীণ অর্থনীতি। উদ্বেগের পারদ চড়েছে মার্কিন-চিন শুল্ক-যুদ্ধ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানকে আক্রমণের হুমকিতেও।
অনিশ্চয়তার বাজারে যা হয়, তা এ বারও হচ্ছে। চড়চড়িয়ে বাড়ছে সোনার দাম। এতে শিকে ছিঁড়েছে এই হলুদ ধাতুতে লগ্নিকারীদের। খুশি গোল্ড ইটিএফ এবং গোল্ড বন্ডে লগ্নিকারীরাও। সব মিলিয়ে বাজার চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে। ভাল রকম উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে সূচকের।
অনেকের বক্তব্য, পরিস্থিতি পাল্টাতেও পারে। তবে অনেক কিছু নির্ভর করছে ৫ জুলাইয়ের বাজেটের উপরে। ফলে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ব্রিফকেস থেকে সে দিন কী বেরোয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই। সেই সঙ্গে বাজারের নজর বর্ষার গতি ও শুল্ক-যুদ্ধের মতো বিষয়গুলিতেও।
(মতামত ব্যক্তিগত)