সেনসেক্স নামল ৮০৭• টাকা পড়ল ৪৫ পয়সা• তেল ২৭ ডলারে

একুশ মাস পরে ফের ২২ হাজারের ঘরে সূচক

সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই পড়ছিল বাজার। বৃহস্পতিবার নামল ধস। সেনসেক্স এক ধাক্কায় পড়ে গেল ৮০৭.০৭ পয়েন্ট। এ দিনও দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক এসবিআই-সহ একগুচ্ছ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মুনাফা তলিয়ে যাওয়াকেই এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে শেয়ার বাজার মহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২০
Share:

সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই পড়ছিল বাজার। বৃহস্পতিবার নামল ধস। সেনসেক্স এক ধাক্কায় পড়ে গেল ৮০৭.০৭ পয়েন্ট।

Advertisement

এ দিনও দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক এসবিআই-সহ একগুচ্ছ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মুনাফা তলিয়ে যাওয়াকেই এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে শেয়ার বাজার মহল। তার সঙ্গে অবশ্য ছিল বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগে দুনিয়া জুড়ে ধসের প্রভাব। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেনের মন্তব্যে যা আরও বেড়ে যায়। বাজারের পতনই এ দিন টেনে নামিয়েছে ডলারে টাকার দামকে। এক ধাক্কায় ৪৫ পয়সা পড়ে যাওয়ায় প্রতি ডলার দাঁড়ায় ৬৮.৩০ টাকা। গত ২৯ মাসে এত নীচে নামেনি টাকা। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দরও ১৩ বছরের তলানিতে নেমে ছুঁয়েছে ব্যারেলে ২৭ ডলার।

এ দিন সূচক থিতু হয় ২২,৯৫১.৮৩ অঙ্কে। একুশ মাস পরে সেনসেক্স ফের চলে এল ২২ হাজারের ঘরে। এর আগে গত তিন দিনে সূচকের পতন ৮৫৮ পয়েন্ট। বস্তুত ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে পতনের ঢেউও এ দিন ভারতের বাজারের পতনে ইন্ধন জোগায়। খোলার পরে পড়েছে মার্কিন বাজারও। প্রসঙ্গত, ইয়েলেন এ দিন মন্তব্য করেন যে, মার্কিন অর্থনীতির যা হাল, তাতে এখনই আর এক দফা সুদ না-ও বাড়াতে পারেন তিনি। কারণ দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি ও তলানিতে নামা তেল মার্কিন অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইয়েলেনের মন্তব্যেই আতঙ্ক গ্রাস করে বিশ্ব বাজারকে।

Advertisement

এ দিকে অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ ভারতের অধিকাংশ ব্যাঙ্কেরই মুনাফা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। অনুৎপাদক সম্পদ খাতে মোটা আর্থিক সংস্থান করতে গিয়েই টান পড়েছে মুনাফায়। আর এর জেরেই এই দিনও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার দর হু হু করে পড়ে য়ায়। যা টেনে নামায় সূচকের পারা। গড়ে প্রায় ৪% পড়ে গিয়েছে ব্যাঙ্ক শেয়ার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পতন ১২% ছাড়িয়ে গিয়েছে। যেমন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের শেয়ার দর পড়ে গিয়েছে ১২.৩৭%। এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক ৯.৬১%, পিএনবি ৮.৯৯%।

তবে শেয়ার বাজার এবং টাকার দামের পতনে তেমন উদ্বিগ্ন নয় কেন্দ্র। অন্তত কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাসের কথা থেকে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। শক্তিকান্তবাবু বলেন, ভারতে শেয়ার বাজারের পতনের হার বিশ্বের বহু দেশের থেকেই কম। একই ভাবে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে মুদ্রার দাম যে-হারে কমেছে, ভারতে টাকার দামের পতন তার তুলনায় অনেক কম। শেয়ার এবং টাকার দামের পতনের জন্য মূলত আন্তর্জাতিক আর্থিক সমস্যাকে দায়ী করে শক্তিকান্তবাবু বলেন, যে-কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র প্রস্তুত।

তবে শক্তিকান্তবাবু যাই বলুন না কেন, ভারতের বাজার নিয়ে চূড়ান্ত ভাবে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে মনে করেন, ‘‘আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রে একের পর এক সমস্যা মাথা চাড়া দিচ্ছে, যার প্রভাব থেকে ভারতের বাজারের মুক্ত থাকা অসম্ভব। বিশ্ব জুড়ে লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আমার আশঙ্কা, আগামী কয়েক দিনে সূচক আরও পড়বে।’’ এই অবস্থায় আপাতত শেয়ার বাজারে লগ্নি থেকে ক্ষুদ্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন অজিতবাবু।

বাড়ছে সোনার দাম। এ যেন কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ। শেয়ার বাজারে টানা পতন দেখে লগ্নিকারীদের মধ্যে অনেকেই নিরাপদ লগ্নির মাধ্যম হিসেবে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছেন সোনায়। আন্তর্জাতিক এবং ভারতের বাজারে সোনার দাম বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। এর আগাম লেনদেনের বাজারে দাম বেড়েছে ৩%। উল্লেখ্য, কলকাতায় গয়নার সোনা মঙ্গলবারের তুলনায় প্রতি ১০ গ্রামে ৭৭০ টাকা বেড়ে এ দিন ছুঁয়েছে ২৮,০২৫ টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement