খাঁ খাঁ: নোটবন্দির পরে চামড়া কারখানায় বন্ধ কাজ। —ফাইল চিত্র।
বাতিল নোটের প্রায় সবটাই (৯৯.৩%) ফিরেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে। কিন্তু খোয়ানো বরাত, হারানো ব্যবসা আর ফিরে পায়নি ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প। এখন ক্ষোভে ফুঁসে তাদের জিজ্ঞাসা, কালো টাকা যদি ধরাই না পড়ল, তা হলে কী লাভ হল নোট নাকচে? কেন অমন হঠকারী সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে গেল বহু ছোট শিল্পের ঝাঁপ? যাঁদের কাজ গেল, কে নেবে তাঁদের পরিবারের দায়িত্ব? এক রাতের ঘোষণায় কত সংস্থায় পাকাপাকি ভাবে তালা পড়ে গেল, তার হিসেব সরকার আদৌ রাখে কি?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, নোটবন্দির প্রভাব কাটিয়ে এক সময়ে বৃদ্ধি ফের মাথা তুলবে। মনে হবে, ঠিক হয়ে গিয়েছে সব কিছুই। কিন্তু যে গভীর ক্ষত ছোট শিল্প, ব্যবসা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের হয়েছে, তা চট করে ভরাট হওয়া শক্ত। এখন বৃদ্ধি ৮% ছাড়ানোর পরে তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে ছোট শিল্পের প্রতিক্রিয়ায়।
নোট নাকচের সময় নগদের টানে ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগণার মগরাহাটে রুপোর গয়না ক্লাস্টারের। একই দশা হয় বাঁশদ্রোণীর ফ্যান-ক্লাস্টারের মতো আরও অনেক ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পেরও। ওই দুই ক্লাস্টারের কর্তা তাপস মণ্ডল ও সুভাষ সেনাপতির প্রশ্ন, ‘‘লাভ কী হল? মাঝখান থেকে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল বহু সংস্থার।’’ মগরাহাটে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে হাজার দুয়েক ছোট কারখানায় রুপোর গয়না তৈরি হত। তাপসবাবুদের দাবি, নোটবন্দিতে গুটিয়ে গিয়েছে প্রায় ৩০০ কারখানা। কর্মীদের অনেকেই রং মিস্ত্রি, নিরাপত্তারক্ষী, রাজমিস্ত্রির সহকারীর মতো অন্য পেশায় যোগ দিতে গ্রামের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন।
বাঁশদ্রোণী ফ্যান ক্লাস্টারের ৭০টি কারখানা নগদেই কেনাবেচা করত। নোট নাকচে প্রায় অর্ধেকের কাজ বন্ধ। সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘নীরব মোদীরা কালো টাকা নিয়ে চলে গেলেন। কপাল পুড়ল আমাদের।’’ সিঙ্গুরে আটা, বেসন, সর্ষের তেলের কারখানা স্বপন দাসের। নগদের অভাবে সেই যে বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে, এখনও রেশ কাটেনি।
ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থার পুঁজি কম। আয় ও মুনাফার হারও বড় শিল্প তো বটেই, কম মাঝারি শিল্পের থেকেও। লেনদেন মূলত নগদ নির্ভরশীল। তাই নোট বাতিলে সবচেয়ে বেশি ধাক্কাও খেয়েছে তারাই। ছোট শিল্পেরই এক প্রতিনিধি বিকাশ মাধোগড়িয়ার যদিও দাবি, এতে লাভ হয়েছে অর্থনীতির। কিন্তু তাঁর কথায় সুর মেলানোর লোক ছোট শিল্পে সত্যিই দুর্লভ।