Lockdown

অর্থনীতির ক্ষত গভীর, পথ খুঁজছেন লগ্নিকারী 

গত সপ্তাহে সেনসেক্স ২৫ হাজারের ঘর থেকে পৌঁছেছিল ৩০ হাজারে। এই অবস্থায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার ত্রাণ ঘোষণা করে কেন্দ্র ও সুদ ছাঁটে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০৪:৩০
Share:

শুনশান: গুজরাতের আমদাবাদে বন্ধ সারি সারি দোকান। এপি

কাটল আরও একটি আতঙ্কে ভরা সপ্তাহ। লকডাউনের জেরে কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য এক রকম স্তব্ধ। এর পরিণাম কী হতে পারে ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞেরা। দেশে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মানুষ ও সংস্থাগুলিকে সুরাহা দিতে কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে ঠিকই। কিন্তু অর্থনীতির ক্ষত যে রকম গভীর হচ্ছে, তাতে তল পাচ্ছেন না লগ্নিকারীরা। ওই ত্রাণে লাভ কতটা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অনেকে আবার বলছেন, পড়তি শেয়ার বাজার নিশ্চয়ই এক সময় ফের উঠবে। কিন্তু এই মুহূর্তে লগ্নির পন্থা কী হবে, তার দিশা পাওয়া জরুরি।

Advertisement

গত সপ্তাহে সেনসেক্স ২৫ হাজারের ঘর থেকে পৌঁছেছিল ৩০ হাজারে। এই অবস্থায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার ত্রাণ ঘোষণা করে কেন্দ্র ও সুদ ছাঁটে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অন্য সময় হলে এত বড় দুই পদক্ষেপ সূচককে হয়তো হাজার পাঁচেক পয়েন্ট উঠত। কিন্তু শুক্রবার সেনসেক্স পড়েছে ১৩১ পয়েন্ট। আসলে বাজারের দুশ্চিন্তা অনেক গভীরে। যে সব ভয় তাকে সন্ত্রস্ত রেখেছে, সেগুলি হল —

• জাতীয় উৎপাদন কমার।

Advertisement

• বেকারত্ব বাড়ার।

• বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার।

• করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য ভারতে লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ার।

• চলতি অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে সংস্থাগুলির ফল খারাপ হওয়ার।

• বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির এ দেশ থেকে লগ্নি তোলার গতি বাড়ার।

• রাজকোষের ঘাটতি বাড়ার।

• রফতানি প্রায় বন্ধে সমূহ ক্ষতির।

ত্রাণের খতিয়ান

• বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ কেন্দ্রের। গরিবদের হাতে খাবার ও অর্থ পৌঁছতে এই ত্রাণ। উপকৃত হবেন চাষি, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, দরিদ্র মহিলা, বিধবা, নির্মাণ কর্মী, প্রবীণ নাগরিক, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ইত্যাদি।
• রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ধার নেয়) ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪.৪% করেছে আরবিআই। এতে ঋণে সুদ কমায় মূলধন জোগাড়ের খরচ কমবে শিল্পের। কমবে বাড়ি-গাড়ি ঋণে কিস্তিও। কেনাকাটায় উৎসাহ পাবেন মানুষ।
• ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে যে ন্যূনতম নগদ জমা রাখতে হয়, তার অনুপাত (সিআরআর) ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমে ৩%। এতে বাজারে নগদের জোগান বাড়বে ১.৩৭ লক্ষ কোটি।
• বাজারে নগদ বাড়াতে রেপো রেটের নতুন হারে ১ লক্ষ কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে আরবিআই।
• আমজনতাকে সুরাহা
দিতে মেয়াদি ঋণে তিন মাস মাসিক কিস্তি স্থগিত রাখার অনুমতি ব্যাঙ্কগুলিকে।
• সংস্থার কার্যকরী মূলধনের (দৈনন্দিন কাজকর্মের
খরচ) ঋণে তিন মাসের জন্য স্থগিত সুদ।

সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ১২,০০০ পয়েন্ট। বাজার যে রকম পড়েছে, তাতে ক্ষতির হিসেব কষে লাভ নেই। অন্য দিকে রেপো রেট কমায় আমানতে সুদ কমার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে লগ্নি পরিকল্পনায় জট পাকিয়েছে। এই অবস্থায়—

• বড় মেয়াদের লগ্নিকারীরা শেয়ার ও ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি ধরে রাখুন।

• এসআইপিতে লগ্নি চালিয়ে যান।

প্রশ্ন থাকছেই

• ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতি এ বার করোনা রুখতে লকডাউনের ঝড় সহ্য করছে। কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষিত সুরাহাগুলি তা কি সামাল দিতে পারবে?
• মানুষের চাকরি-রোজগার অনিশ্চিত। হাতে আসা বাড়তি টাকা লোকে আদৌ খরচ করতে চাইবেন কি?
• বিক্রি না-বাড়লে, শিল্প লগ্নি করতে আগ্রহী হবে কেন? তা সে মূলধন জোগাড়ের খরচ যতই কমুক।
• চাহিদা তো ছিলই না। এখন উৎপাদন, জোগানও সঙ্কটে। তা সামলানোর পথ কই?
• বিশ্ব অর্থনীতি সত্যিই মন্দার কবলে পড়লে?
• করোনার ক্ষত কত গভীর হবে? অর্থনীতি কত দিন স্তব্ধ জনজীবনের মাসুল গুনবে?
• লকডাউনের ধাক্কা সব ছোট-মাঝারি সংস্থা সইতে পারবে? সে ক্ষেত্রে উপায়?
• বিমান, পর্যটন, হোটেল শিল্প বিধ্বস্ত। তাদের অক্সিজেন না-জোগালে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কোথায় পৌঁছবে বেকারত্ব?

• ইনডেক্স ও ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন।

• প্রয়োজনে ৭.৭৫% সুদযুক্ত ভারত সরকারের বন্ড ও প্রবীণ নাগরিকেরা ৮.৬% সুদযুক্ত সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে লগ্নি করতে পারেন।

• চাইলে কম দামে বেশ কিছু ভাল মানের শেয়ার কেনার এটাই সময়।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement