আলোচনা: বাজেট পরবর্তী বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। শনিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
বৃদ্ধির গতি শ্লথ ও আর্থিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে। অভিযোগ উঠেছে, এই অবস্থায় নতুন করে লগ্নির জন্য হাত খুলছে না সংস্থাগুিল। ফলে চাহিদা বাড়ছে না ঋণের। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের অবশ্য দাবি, সেই অবস্থা ক্রমশ বদলে ঋণের চাহিদায় গতি ফিরছে। আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বাজেট পরবর্তী বৈঠকে বসেছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কের পর্ষদ। তার পরে গভর্নর বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর সুবিধা আগামী দিনে আরও বেশি করে ঋণগ্রহীতার কাছে পৌঁছবে বলে তাঁদের আশা। পাশাপাশি তিনি বলেন, সরকার রাজকোষ ঘাটতি কম রেখে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। যে কারণে বাজেটের বিভিন্ন প্রস্তাবে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।
শক্তিকান্ত জানান, অক্টোবর থেকে জানুয়ারিতে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা। আর সামগ্রিক ভাবে ব্যাঙ্ক, দেশের বাজার এবং বৈদেশিক ঋণ মিলিয়ে জানুয়ারি শেষে তা পৌঁছেছে ৭.৫ লক্ষ কোটিতে। সেপ্টেম্বরের শেষে যেখানে ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া ঋণ আগের বছরের তুলনায় ১.৩ লক্ষ কোটি কম ছিল, এখন তা ২.৭ লক্ষ কোটি বেশি। আগামী দিনে তা আরও বাড়বে বলে তাঁদের আশা। যদিও এ প্রসঙ্গে অনেকে বলছেন, কয়েক দিন আগেই বাজেট পরবর্তী বৈঠকে সহজে ঋণ মিলছে না বলে জানিয়েছিলেন শিল্প মহলের একাংশ। তাঁদের মতে, বন্ধক ছাড়া ঋণও মিলছে না। এ দিন অবশ্য শক্তিকান্ত বলেছেন, ধীরে হলেও নিয়ম করে বাড়ছে ঋণের পরিমাণ। এ দিকে, আগামী অর্থবর্ষে গ্রামাঞ্চলে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধেছে কেন্দ্র। আর চলতি অর্থবর্ষে তা ১৩.৫ লক্ষ কোটি। সে জন্য ওই সব এলাকায় দেওয়া ঋণে সরকার নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে নির্মলার ঘোষণা করা বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয় আজ। শক্তিকান্তের দাবি, ওই সমস্ত প্রস্তাবের জেরে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দেওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। কারণ, সরকার রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখতে যথেষ্ট সচেষ্ট। বাজেটে অর্থমন্ত্রী তা বাড়ালেও, এখনও সেই হার আর্থিক দায় ও বাজেট সংক্রান্ত আইনে বলা সীমার মধ্যেই রয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রের ঋণের বড় অংশই আসবে স্বল্প সঞ্চয়ের লগ্নি থেকে। ফলে মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ার সে রকম সম্ভাবনা নেই।
উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ছুঁয়েছে ৩.১%। আর খুচরো মূল্যবৃদ্ধি (ঋণনীতি ঘোষণার সময়ে যে মূল্যবৃদ্ধিতে নজর রাখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক) দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত শতাংশের বেশি। শক্তিকান্তের দাবি, মূলত দুধ, মাছ এবং বিভিন্ন প্রোটিন নির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার জেরেই মাথাচাড়া দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। আর তাতে প্রভাব ফেলেছে টেলিকম সংস্থাগুলির মাসুল বাড়ানোও। তবে অশোধিত তেলের দাম কমার প্রভাব মূল্যবৃদ্ধিতে পড়বে বলেই তাঁর আশা।
এ দিকে, ভারতে অর্থবর্ষ শুরু হয় এপ্রিলে আর শেষ মার্চে। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তা জুলাই থেকে জুন। ২০২০-২১ সালের মধ্যে শীর্ষ ব্যাঙ্কের অর্থবর্ষ সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে আরবিআই পর্ষদ। এ জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোয় সায় দিয়েছে তারা। অনেকে বলছেন, এটা হলে আগামী দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ডিভিডেন্ড খাতে কত অর্থ হাতে আসবে, তা আন্দাজ করতে সুবিধা হবে কেন্দ্রের। সরকার ও শীর্ষ ব্যাঙ্কের মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়ানোর পক্ষে আজ সওয়াল করেছেন খোদ অর্থমন্ত্রীও।