যে নোটের অপেক্ষা এখন রাজ্য জুড়ে। — পিটিআই
বিরাট কোহালি বা শাহরুখ খান নন। এই মুহূর্তে সেরা ‘সেলিব্রিটি’ সম্ভবত নতুন ৫০০ টাকার নোট!
১০০০ আর পুরনো পাঁচশোর নোট বাতিলের সরকারি ফরমানের পরে এই নতুন পাঁচশোর পথ চেয়েই বসে রয়েছে ১২৫ কোটি মানুষের দেশ। কবে ‘তার’ দেখা মেলে। কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যেই তা ঢুকে পড়েছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এ রাজ্যে অবশেষে নতুন পাঁচশোর দেখা পাওয়া যাবে আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই।
বিশেষজ্ঞ থেকে আমজনতা— সকলেই বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জিয়ন কাঠি আসলে রয়েছে নতুন পাঁচশোরই পকেটে। ওই নোট ঢুকলে, তবে এটিএমে টাকার জোগান বাড়ানো সম্ভব হবে। হিল্লে হবে ২০০০ টাকার নোট ভাঙানোরও।
ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন বেফি-র সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাসের দাবি, বৃহস্পতিবারই কিছু নতুন ৫০০ টাকার নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখায় আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘এখন শুনছি শনিবার দশ বাক্স ৫০০ টাকার নোট আসবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিতে সোমবারের আগে তার দেখা মিলবে না।’’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এক-একটি বাক্সে এক লক্ষ ৫০০ টাকার নোট ধরে। ফলে ওই নোট প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় নস্যি বলে মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ৩০টি বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক রয়েছে। ওইটুকু টাকা আর ক’জনকেই বা দেওয়া যাবে?’’
আবার কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি সূত্রে খবর, নাসিকের ছাপাখানা থেকে সোমবার নতুন পাঁচশোর নোট তাদের কাছে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সেই নোট সাধারণ মানুষ বুধবারের আগে পাবেন না। কারণ, প্রথমে তা যাবে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কারেন্সি চেস্ট-এ। তারপর সেই সব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন যে, তাদের কোন শাখায় কত নোট লাগবে। ফলে সোমবার শহরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দফতরে পাঁচশোর নোট ঢুকলে, তা হাতে পেতে সাধারণ মানুষকে বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তাঁর দাবি।
দুই সূত্রেই আগামী সপ্তাহের গোড়ায় নোট পৌঁছনোর যে কথা বলা হচ্ছে, তা কিন্তু মূলত কলকাতা ও বড়জোর তার লাগোয়া শহরতলির জন্য। জেলায় ওই নতুন নোট পৌঁছবে আরও পরে। অথচ অনেকের মতে, জেলার ডাকঘরে ওই নোট দ্রুত পৌঁছনো একান্ত জরুরি। কারণ, গাঁয়ে-গঞ্জে এই ডাকঘরই টাকা লেনদেনের প্রাণভোমরা।
পাঁচশোর নোটের জন্য এমন আকূল আর্তি মূলত দু’টি কারণে:—
প্রথমত, এই মুহূর্তে বাজারে নগদের যা চাহিদা, তাতে বড় নোট (নতুন ৫০০ ও ২০০০) না ভরা পর্যন্ত এটিএমে চাহিদা সামাল দেওয়া শক্ত। একটি মেশিন শুধু ১০০ টাকার নোটে বোঝাই করলে যে টাকা ভরা যায়, তার থেকে অনেক বেশি পোরা যাবে ৫০০ ও ২০০০-এর নোট ভরলে। আর বেশি নোট ভরতে পারলে, তবেই সেখানে টাকা থাকবে। নইলে এখনকার মতো ফুরিয়ে যাবে ভরতে-না-ভরতেই। তার জন্য অবশ্য এটিএম মেশিনগুলিকেও দ্রুত নতুন নোটের উপযুক্ত করে তোলা একান্ত জরুরি।
দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে ছোট দোকানদার— সকলেই বলছেন যে, পাঁচশোর নোট বাজারে না আসা পর্যন্ত অনেকটা অকেজো হয়ে পকেটে পড়ে থাকবে ২০০০ টাকার নোটও। কারণ, শুধু একশোর ভরসায় তা ভাঙানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দক্ষিণ শহরতলির মাছ বিক্রেতা মিলন রায় বলছিলেন, ‘‘পাঁচশোর নোট না ঢুকলে বাজারের অবস্থা কিছুতেই ভাল হবে না।’’ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার যোধপুর পার্ক শাখার সহকারী ম্যানেজার প্রশান্ত দাসের মতেও, ‘‘নতুন পাঁচশোর নোট না ঢুকলে, ২০০০-এর নোটের তেমন উপযোগিতাই নেই।’’
তা ছাড়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচশোর নতুন নোট আসতে যত দেরি হবে, তত বাড়বে দাগ লাগা, ময়লা ১০০ টাকার নোটের সংখ্যা। যা কমাতে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
অবশ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখায় কত নগদ রয়েছে, তা নিয়েও ছবি খুব স্পষ্ট নয়। শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি, নগদের জোগানে কোনও খামতি নেই। অথচ বৃহস্পতিবার বেফি জানিয়েছিল, নোট বাতিলের পরে ওই অফিসে টাকা এসেছে দু’বার। গত ৯ ও ১৫ তারিখে শালবনির ছাপাখানা থেকে মোট ৭,৩২০ কোটি। উল্লেখ্য, শীর্ষ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের টাকা রাখার ২১৮টি চেস্ট রয়েছে। রাজ্যের জন্য ২০০টি। এর সবগুলি থেকেই টাকা তোলার চাহিদা এখন চড়া।
এ দিকে, নোট বদলাতে গেলে ভোটের কালি লাগানো নিয়ে ডামাডোল এখনও জারি। বেফি-র অভিযোগ, অধিকাংশ শাখায় কালি ছাড়াই বাতিল নোট বদল চলেছে। কোথাও আবার লাগানো হয়েছে স্ট্যাম্প প্যাডের কালি। তার উপর নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনের দিন এসে পড়া এলাকায় ওই কালি ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও স্টেট ব্যাঙ্কের কলকাতা সার্কেলের সিজিএম পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তর দাবি, তাঁরা এ নিয়ে কোনও নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও পাননি।