Coronavirus

শ্রম আইন শিথিলে অশনি সঙ্কেত

লগ্নিকারী টাকা ঢালার আগে পরিকাঠামো পরখ করেন। যাচাই করেন যোগাযোগ, পরিবহণের সুবিধা।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি

চিন থেকে মুখ ফেরানো বহুজাতিকের লগ্নি টানা দূর। শুধু শ্রম আইন শিথিল করে করোনার হ্যাঁচকা টানে থমকে যাওয়া শিল্পের চাকায় গতি ফেরানোও কার্যত অসম্ভব বলে দাবি অনেক বিশেষজ্ঞের। তাঁদের আশঙ্কা, ভারতে এমনিতেই শ্রম আইন ভাঙার ঝোঁক বেশি। সরকারই তা তুলে দিলে চাকরির নিরাপত্তা কমবে। গোঁত্তা খাবে পিএফ, ইএসআইয়ের মতো সামাজিক সুরক্ষা। কাজের বাজারে সম্ভাবনা নৈরাজ্যের। অথচ সেই চড়া মাসুল গুনেও মরিচিকাই থাকবে লগ্নির বান কিংবা বিপুল কর্মসংস্থান। এই মতের শরিক অধিকাংশ সর্ব ভারতীয় কর্মী সংগঠনও। যদিও লগ্নির খরা কাটিয়ে শিল্পে প্রাণ ফেরাতে ওই আইনে ‘কড়াকড়ি’ কমানোর পক্ষপাতী নিয়োগকারীদের বড় অংশ।

Advertisement

অধিকাংশ বিরোধী দল ও ট্রেড ইউনিয়নের অভিযোগ, অর্থনীতিতে করোনার ধাক্কা যোঝার ‘অজুহাতে’ একের পর এক শ্রমিকবিরোধী পদক্ষেপ করছে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। দিনে কাজের সময় ৮ থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার কথা তো বলা হচ্ছেই। তিন বছরের জন্য বহু শ্রম আইন শিথিলের কথাও জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। দাবি, করোনার ছোবলে মৃতপ্রায় শিল্পকে চাঙ্গা করাই এর লক্ষ্য। সঙ্গে পাখির চোখ বিদেশি লগ্নি। বিশেষত মারণ অতিমারির পরে চিন থেকে মুখ ফেরানো বহুজাতিকগুলির। কিন্তু শুধু এই অস্ত্রে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক আদিত্য ভট্টাচার্যের কথায়, “এ দেশে শিল্পের ৯০% অসংগঠিত ক্ষেত্রে। যেখানে শ্রম আইন ঢিলেঢালা। কার্যত নেই। সংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদেরও অনেকে স্বল্প মেয়াদি ঠিকা কর্মী। যাঁরা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থায় আইন আরও শিথিলের অর্থ বাকিদের বিপদ বাড়ানো। আগেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে থাকা কর্মীদের নামমাত্র টাকায় নিংড়ে নেওয়ার বন্দোবস্ত আরও পাকা করা।”

Advertisement

আরও পড়ুন: বিপুল ত্রাণের পক্ষে সওয়াল কৌশিক বসুর

লগ্নিকারী টাকা ঢালার আগে পরিকাঠামো পরখ করেন। যাচাই করেন যোগাযোগ, পরিবহণের সুবিধা। দেখেন, জমি-জট কেমন, নাগালে থাকা মজুরিতে দক্ষ কর্মী মিলবে কি না, লাল ফিতের ফাঁস কতটা শক্ত বা কত দিন লাগবে ব্যবসা চালুর ছাড়পত্র পেতে। এ কথা মনে করিয়ে আদিত্য বলেন, “এই সবে জোর না-দিয়ে শুধু শিথিল শ্রম আইনের টোপে লগ্নি টানা অসম্ভব। কম খরচে, একলপ্তে যে বিপুল পণ্য উৎপাদন এবং তাকে সারা বিশ্বে বিক্রি চিনে সম্ভব, তার মূল কারণ পরিকাঠামো। বিশ্ব বাজারে দরের গলা-কাটা প্রতিযোগিতায় যুঝে টিকে থাকতে চট করে যা থেকে মুখ ফেরানো যে কোনও সংস্থার পক্ষে শক্ত।”

২০১৪ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, শ্রম নিয়ন্ত্রণ লগ্নির পথে বাধা নয় বলে জানিয়েছিল এ দেশে টাকা ঢালা ৪৫% সংস্থা। অথচ করের হার বা কর ব্যবস্থা সমস্যা নয় বলে ধারণা ৩০% ও ৩৪% সংস্থার। এ কথা মনে করিয়ে দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির দাবি, “পণ্য তৈরির সময়ে কারখানায় যে মূল্য যোগ হয়, উন্নত দুনিয়ায় সংগঠিত উৎপাদন শিল্পে শ্রমের অংশীদারি প্রায় ৬০%। ভারতে আশির দশকে তা ছিল ৩০%। এখন কমে ১০%-১২%। এই টাকা আর কমানো যাবে কতটুকু!” তাঁর মতে, শ্রম আইন শিথিল হলে, কর্মীদের বিপত্তি বাড়বে। সহজ হবে ছাঁটাই। আরও বেশি হাত পড়বে ন্যূনতম বেতন, পিএফে। কিন্তু তাঁর দাবি, শুধু শিথিল শ্রম আইনের জোরে চিনকে টেক্কা দেওয়া কার্যত দিবাস্বপ্ন।

শিল্পে প্রাণ ফেরাতে শ্রমমন্ত্রীর কাছে ২-৩ বছর শ্রম আইন শিথিলের আর্জি জানিয়েছে নিয়োগকারীদের নানা সংগঠন। এতে ব্যবসায় সুবিধার কথা বলছে বহু নিয়োগ উপদেষ্টা সংস্থাও। কিন্তু এক্সএলআরআই-এর অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের বক্তব্য, “উৎপাদন শিল্পে বিদেশি লগ্নির সিংহভাগই যায় গুজরাত, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তেলঙ্গানায়। কারণ, বন্দর-সহ পরিকাঠামো, দক্ষ কর্মী, বিপুল সংখ্যক অনুসারী শিল্প। তাই শুধু শ্রম আইন শিথিল করে লগ্নি টানার চেষ্টা হয়তো উনিশ শতকের শ্রমিক-শোষণের দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। দেখা দেবে নৈরাজ্য। কিন্তু লগ্নি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি বা কর্মী উন্নয়নের চিঁড়ে ওই জলে ভেজা শক্ত।”

আরও পড়ুন: মকুব নয়, লাগাম সম্ভব স্থায়ী খরচে

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement