—ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে অনিশ্চয়তার জেরে শেয়ার বাজার গত দু’সপ্তাহ ধরে বেশির ভাগ দিনই নিম্নমুখী। ফলে চলতি অর্থবর্ষে (৩১ মার্চের মধ্যে) বাজারে এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি করে মোদী সরকার ঘরে টাকা তুলতে পারবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তার মধ্যেই বুধবার সেই পথে আরও এক ধাপ এগোল তারা। সূত্রের খবর, বাজারে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি (আইপিও) করে তহবিল সংগ্রহের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাটি এ দিন শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির সায় পেয়েছে। যার মানে, কবে শেয়ার ছাড়া হবে, কত দিন কেনার সুযোগ খোলা থাকবে, কত দামে পাওয়া যাবে, কোন ধরনের লগ্নিকারীর জন্য কত ছাড় ইত্যাদি ঘোষণা করতে আর কোনও বাধা রইল না।
চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ থেকে ৭৮,০০০ কোটি টাকা রাজকোষে ভরার লক্ষ্য স্থির করেছে কেন্দ্র। লক্ষ্য পূরণ না-হলে আয় কমায় রাজকোষ ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা। বিশেষ করে গোটা অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত যেখানে এই পথে মাত্র ১২,০৩০ কোটি উঠেছে। ফলে এই মুহূর্তে এলআইসি-র আইপিও-র দিকে কার্যত চাতক পাখির মতো তাকিয়ে তারা। সরকারের আশা, সংস্থার শেয়ার বেচে প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। সূত্রের খবর, এই পথ পরিষ্কার করতেই রেকর্ড সময়ে প্রস্তাব অনুমোদন করল সেবি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আইপিও-র খসড়া প্রস্তাব (রেড হেরিং প্রসপেক্টাস) জমা দেওয়া হয়েছিল। সায় মিলেছে তার এক মাস পেরনোর আগেই। এর আগে কোনও সংস্থার শেয়ার বিক্রির প্রস্তাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে সিলমোহর দিতে দেখা যায়নি বাজার নিয়ন্ত্রককে।
বহু লগ্নিকারীও এলআইসি-র শেয়ার কেনার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের জেরে অশোধিত তেলের চড়া দাম, মূল্যবৃদ্ধির মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা বা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া বানচাল হওয়ার মতো দুশ্চিন্তা তো শেয়ার বাজারকে নামাচ্ছেই, কিন্তু তারও আগে থেকে সূচকের পতনের একটা কারণ ছিল এলআইসি। মনে করা হচ্ছে, ছোট লগ্নিকারীদের বড় অংশ হাতের শেয়ার বেচে টাকা তুলে রাখছিলেন ওই সংস্থার শেয়ার কিনবেন বলে। কিন্তু বাজারের লাগাতার পতনে আইপিও আসবে কিনা, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে ধন্দ। অনিশ্চয়তা যে আছে, তা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও।
তবে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “পরিস্থিতি বুঝেই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। যুদ্ধ এবং তার জেরে অশোধিত তেলের দাম আকাশছোঁয়ায় বাজার চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে সরকার গঠনের পরে বাজারের প্রতিক্রিয়া এবং আগামী কয়েক দিন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবস্থা কী দাঁড়ায়, তারও বড় ভূমিকা আছে এলআইসির শেয়ারে।’’