ইনফোসিসের সিইও ও এমডি-র পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বিশাল সিক্কা।
সাইরাস মিস্ত্রির পরে বিশাল সিক্কা। ভারতের কর্পোরেট দুনিয়া আরও একটি তিক্ত মুহূর্তের সাক্ষী রইল। ইনফোসিসের সিইও ও এমডি-র পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বিশাল সিক্কা। অবশ্য সংস্থার এগজিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়ে যাবেন তিনি। একটি চিঠিতে সংস্থার কর্মীদের কাছে তাঁর পদত্যাগের কারণ তুলে ধরেছেন বিশাল। যে চিঠিতে তাঁর সময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সঙ্গে তার ক্রমাগত বিরোধের কথা উঠে এসেছে। উঠে এসেছে এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভের কথাও। সিক্কার সেই ক্ষোভের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ইনফোসিসের বর্তমান বোর্ডও। যার প্রমাণ মিলেছে সিক্কার চিঠির পরেই ইনফোসিসের বোর্ডে তরফে প্রকাশ করা বিবৃতিতেও। সূত্রের খবর, সংস্থার দায়িত্ব আবার হাতে তুলে নিতে পারেন নন্দন নিলাকানি।
আরও পড়ুন: সিক্কার ইস্তফা, নারায়ণমূর্তিকেই দায়ী করল ইনফোসিস
তিন বছর আগে বিশাল সিক্কাকে নিজেই বেছে নিয়েছিলেন ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ নারায়ণ মূর্তি। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে বিশাল-এর দক্ষতার কথা মনে রেখেই ইনফোসিসের দায়িত্ব তাঁর কাধে তুলে দেওয়া হয়। সেই সময়ে ইনফোসিস বেশ খানিকটা সঙ্কটের মধ্যেই ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে এক ধরনের পরিবর্তনের সময় চলে এসেছিল। বিশাল এই পরিবর্তনের সময়ে দক্ষ কাণ্ডারী হবেন এমনটাই আশা করা হয়েছিল। বিশালও এই চ্যালেঞ্জটি নিতে আগ্রহী ছিলেন বলেই চিঠিতে জানিয়েছেন।
চিঠিতে বিশাল সে কথা উল্লেখও করেছেন। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা পরিবর্তনের সময়ে কাজে লেগেছিল। অটোমেশন-ই যে তথ্যপ্রযুক্তির ভবিষ্যত সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিশাল। বিশাল দাবি করেছেন, ইনফোসিস এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন সদ্যপ্রয়াত ইনফোসিস কর্মী সন্দীপ কারামোঙ্গিকারের কথা। যিনি এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়েই কাজ করছিলেন। বিশালের সময়টুকু ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও টালমাটাল সময়। ব্রেক্সিট, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা এবং তাঁর ভিসা নীতি— এই দু’টি ধাক্কা ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিকে শিল্পকে সঙ্কটের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ব্যবসা হারানোর পাশাপাশি, অসংখ্য কর্মীর চাকরি হারানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সঙ্কট এখনও মেটেনি।
আরও পড়ুন: শাপুরজিদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ টাটা সন্সেরবিশাল চিঠিতে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি এই সঙ্কটকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন। বিশালের দাবি, সেই সঙ্কটের মধ্যে ইনফোসিস নিজের সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে পেরেছিল। কিন্তু ধাক্কা এসেছে অন্যত্র থেকে। বিশালের মতো এই পরিবর্তনের সময়ে যাঁরা ইনফোসিসের মার্গদর্শক হয়ে পারতেন, নারায়ণ মূর্তি, নন্দন নিলাকানি, মোহনদাস পাই-এর মতো সেই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারা উল্টে বিশাল-সহ ইনফোসিসের পরিচালন পর্ষদকে তীব্র আক্রমণ করে গিয়েছেন। এই আক্রমণে একে বারে সামনের সারিতে ছিলেন স্বয়ং নারায়ণ মূর্তি। সেই আক্রমণ শুধু সংস্থার পরিচালনা নিয়েই নয়, ব্যক্তিগত স্তরেও পৌঁছে গিয়েছিল বলে বিশালের অভিযোগ। বার বার এমন সব অভিযোগ আসছিল যা ভিত্তিহীন। সংস্থার অন্তর্তদন্তে তেমনই প্রমাণ মিলেছে বলে বিশাল তাঁর বিদায়ী চিঠিতে দাবি করেছেন। কিন্তু তার পরেও আক্রমণের ধার কমেনি। বিশাল-সহ সংস্থার উচ্চপদস্ত অফিসারদের বেতন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে সাধারণ কর্মীদের বেতনের বিপুল পার্থক্যের কথাও বার বার মূর্তির অভিযোগ হিসেবে উঠে এসেছে। এটি ইনফোসিসের ভাবমূর্তির বিরোধী বলেও মূর্তি নানা সময়ে মন্তব্য করেছেন। বিশাল এই আক্রমণের কথাই উল্লেখ করেছেন। এই আক্রমণ আদতে ইনফোসিসের ক্ষতি করেছে বলে বিশাল চিঠিতে লিখেছেন।
ক্রমাগত এই আক্রমণ সামলাতে না পেরেই অবশেষে বিশাল সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সংস্থার বোর্ডের সদস্যরা এখনও তাঁর পক্ষেই আছে বলে বিশাল জানিয়েছেন। যদিও চিঠির শেষে বিশালের আশা, নতুন কর্তার হাত ধরে ইনফোসিস সামনের এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে।
এর পরেই কর্পোরেট মহলে নন্দন নিলাকানিকে নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইনফোসিসের এই সঙ্কটের সময়ে নিলাকানিকে নন-এগজিকিউটিভ চেয়ারপার্সন হিসেবে ফেরত আনার কথাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যিনিই আসুন, ইনফোসিসের নতুন সিইও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে বলেই মনে করেছে কর্পোরেট মহল। প্রতিষ্ঠাতাদের সব সময়ে নজরের সামনে কাজ চালানো মুশকিল মনে করে অনেকেই আগ্রহ নাও প্রকাশ করতে পারেন।