লেম্যানের পতনের পরে মার্কিন অর্থনীতি যেন ধসে গিয়েছিল স্রেফ তাসের ঘরের মতো। ছবি: এএফপি।
ঠিক দশ বছর আগে এই দিনেই দেউলিয়া ঘোষণা করেছিল লেম্যান ব্রাদার্স। ৬০ হাজার কোটি ডলার ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আমেরিকার চতুর্থ বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছিল ওই ধার তখন আর শোধ করতে পারবে না তারা।
সমস্যার শুরু বাড়ির আকাশছোঁয়া দামের বুদ্বুদ ফেটে যাওয়া থেকে। অর্থনীতির পরিভাষায় ‘সাবপ্রাইম মর্টগেজ ক্রাইসিস’। সহজ কথায়, যে দাম ধরে বাড়ি বন্ধক রেখে ধার দেওয়া হয়েছিল, পরে ব্যাঙ্ক দেখল যে, তার বাজারদর আসলে অনেক কম। ফলে শোধ না হওয়া ঋণের টাকা ঘরে ফেরার আশা প্রায় নেই। তার উপরে অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল থাকাকালীন ঋণ দেওয়াও হয়েছিল দেদার। তার উপরে আবার জটিল ডেরিভেটিভের আঁক কষেছিল বিমা সংস্থা ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কগুলি। সব মিলিয়ে, অর্থনীতির মরণফাঁদ। সবার আগে সাবধান করেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজনই।
অবশ্য স্বাস্থ্যে যে ঘুণ ধরেছে, মার্কিন অর্থনীতির নাড়ি টিপে তা টের পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। কিন্তু লেম্যানের পতনের পরে যেন তা ধসে গিয়েছিল স্রেফ তাসের ঘরের মতো। একে একে দেউলিয়া ঘোষণা করে জিএম, ক্রাইসলারের মতো মার্কিন গাড়ি বহুজাতিক। মাথাচাড়া দেয় মাত্রাছাড়া বেকারত্ব। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ, এশিয়া-সহ সারা পৃথিবীতে। ভয়াল মন্দার মুখোমুখি হয় সারা বিশ্ব। তার তুলনা টানা শুরু হয় ১৯৩০ সালের ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’-এর সঙ্গে। ভারতে অর্থনীতির চাকায় গতি ধরে রাখতে ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করে ইউপিএ সরকারও।
আরও পড়ুন: ছবিতে লেম্যান ব্রাদার্স পতনের এক দশক
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এক দশক পেরিয়ে এসে এখনও লেম্যানের ছায়া থেকে পুরোপুরি বার হতে পারেনি দুনিয়া। অর্থনীতি হয়তো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু রয়ে গিয়েছে ‘চিরস্থায়ী’ ক্ষত।
এখন কী অবস্থায়...
দশ বছর আগে দুর্বল মার্কিন অর্থনীতি ভারত সমেত সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ ছিল। আর এখন চিন্তা ‘শক্তিশালী’ মার্কিন মুদ্রা।
মার্কিন অর্থনীতির হাল এখন চাঙ্গা। বৃদ্ধির হার ভাল। বেকারত্ব কম। রোজ বাড়ছে ডলারের বিনিময় মূল্য। অনেকের মতে অবশ্য, সংখ্যার বিচারে দেখতে ভাল হলেও এখনও বিস্তর খাদ মার্কিন অর্থনীতিতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ভুল পুনরাবৃত্তির।
মাঝের এক দশকে বিস্তর ভুগেছে ইউরোপ। অনেক দেশকেই ফিরতে হয়েছে মন্দার কবল থেকে। সমস্যা হয়েছে জাপানেরও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সব থেকে বেশি মাসুল গুনেছে সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশগুলি। আজও মন্দার খেসারত দিচ্ছে তারা।