—প্রতীকী ছবি।
অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে যে ক্ষেত্রটিতে কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে তা হল পরিকাঠামো। চলতি অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) বাজেটে কার্যত নজিরবিহীন ভাবে সেখানে বরাদ্দ ৩৩% বাড়িয়ে তা ১০ লক্ষ কোটি টাকায় তুলে নিয়ে যায় তারা। আর বুধবার সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হল, গত ডিসেম্বরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ আটটি পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির হার মুখ থুবড়ে পড়েছে। দাঁড়িয়েছে ৩.৮%, যা ১৪ মাসের সর্বনিম্ন। এই পরিসংখ্যান সামনে এল অন্তর্বর্তী বাজেটের ঠিক আগের দিন। ফলে উদ্বেগ বাড়ল কেন্দ্রের। এ দিনই নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন, অর্থনীতির চাকায় গতি ফিরলেও বেসরকারি সংস্থাগুলি এখনও লগ্নির জন্য হাত খুলছে না। ফলে সেখানে ভাটার টান। বিনিয়োগের সেই ফারাক মেটাতে সরকারের মূলধনী খরচই এখন ভরসা। আপাতত তা চালিয়ে যেতে হবে।
এ দিন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত মাসে অশোধিত তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, শোধনাগারে তৈরি পণ্য, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট এবং বিদ্যুতের সম্মিলিত উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমেছে ৩.৮ শতাংশে। নভেম্বরে তা ৭.৯% ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৮.৩%। সে বছর অক্টোবরে শেষ বার পরিকাঠামো বৃদ্ধির হার (০.৯%) গত ডিসেম্বরের চেয়ে কম ছিল। গত এপ্রিল-ডিসেম্বরে এই ক্ষেত্রে সম্মিলিত বৃদ্ধির হার ৮.১% দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, শিল্পোৎপাদনে আটটি পরিকাঠামোর গুরুত্ব থাকে ৪০.২৭%। ফলে সেই পরিসংখ্যানে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, ‘‘পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি ভাল না হওয়ায় ডিসেম্বরে শিল্পবৃদ্ধির হার ১-৩ শতাংশে নামতে পারে।’’ উল্লেখ্য, ডিসেম্বরে অশোধিত তেলের উৎপাদন সরাসরি ১% কমেছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ, ইস্পাত ও সিমেন্টের উৎপাদন। একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির হার এক বছর আগের তুলনায় বেশি।
এ দিন নীতি আয়োগের প্রাক্তন কর্তা মন্তব্য করেছেন, বেসরকারি ক্ষেত্রের লগ্নি এখনও ‘দুর্বল’। যা অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এই ফারাক পূরণ করার জন্য অন্তর্বর্তী বাজেটেও সরকারকে মূলধনী খরচ চালিয়ে যেতে হবে। পরোক্ষ কর সংগ্রহ বেড়েছে। বেড়েছে রাজস্ব সংগ্রহের পরিধি। ফলে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রেখেও সরকারের পক্ষে মূলধনী খরচের জোগান দেওয়া সম্ভব। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার মূলধনী খরচ অব্যাহত রাখবে। কারণ, বেসরকারি বিনিয়োগ এখনও বেশ দুর্বল। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে পুঁজির এই ফারাক এবং পণ্য পরিবহণের (লজিস্টিক্স) উঁচু ব্যয় অর্থনীতিকে ভোগাচ্ছে। মূলধনী খরচ বাড়িয়েই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’’ প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদের আশা, আগামী দিনে বেসরকারি লগ্নি বাড়বে। তখন সরকারের কাঁধ থেকে কমবে খরচের চাপও। তবে খরচের জন্য রাজকোষের আয় বাড়াতে গেলে সরকারি সম্পদ থেকে আয় এবং বেসরকারিকরণের পালেও গতি আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে, বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার জন্য তার লক্ষ্যমাত্রাও কমিয়েছে সরকার। দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিলেও সেই রাস্তায় এখনও বেশি দূর এগোনো যায়নি।