কলকাতার শাসমল-নাথ এন্টারপ্রাইজ়ের থেকে পশ্চিমবঙ্গের অনেক সংস্থাই লোহা কিনেছে দাবি করে জিএসটি দফতরে বিল জমা করেছিল। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সংস্থার দুই ডিরেক্টর, স্বপন শাসমল ও মলয় নাথের মধ্যে প্রথমজন কলের মিস্ত্রি। দ্বিতীয়জন পাথর কাটার কাজ করেন। হাতে সামান্য টাকা গুঁজে দিয়ে তাঁদের নামে ভুয়ো লোহা কেনাবেচার সংস্থা খুলেছেন সুমন্ত দাস নামে অন্য এক ব্যক্তি।
বাস্তবে ওই সংস্থা কোনও লোহা কেনাবেচা করত না। শুধু খাতায়-কলমে লেনদেনের হিসেব দেখিয়ে পাকা বিল বানাত। অন্য কিছু সংস্থা সেই বিল কিনে সরকারের ঘরে জমা দিত জিএসটিতে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বা কাঁচামালে কর ফেরত পেতে।
বাংলায় ‘বিল বেচা’ নামে পরিচিত এই প্রতারণার সুবাদে কলকাতা এ বার দেশে প্রথম স্থানে। জিএসটি জালিয়াতিতে দিল্লিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ রাজস্থানের জয়পুর ও হরিয়ানার পঞ্চকুলা।
২০১৮ সালের মে মাসে প্রথম কলকাতায় জিএসটি জালিয়াতি চক্রের খোঁজ মেলে। অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতর সূত্রের খবর, গত নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব গোয়েন্দারা ৬৬৪১টি জালিয়াতির মামলা করেছেন। তাতে ৭১৬৪টি সংস্থা জড়িত। উদ্ধার হয়েছে ১০৫৭ কোটি টাকা। সব থেকে বেশি প্রতারণার খোঁজ মিলেছে জিএসটি কলকাতা জোনে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র একাধিকবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, জিএসটি থেকে পর্যাপ্ত আয় না-হওয়ার অন্যতম কারণ জালিয়াতি। যার জন্য দায়ী জিএসটি ব্যবস্থার ফাঁকফোকড়।
রাজস্ব দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভুয়ো সংস্থা খোলার ক্ষেত্রে কলকাতা বরাবরই অন্য শহরকে পিছনে ফেলে। নোট বাতিলের পরেও দেখা গিয়েছিল, পুরনো নোট জমা দিতে রাতারাতি বহু ভুঁইফোড় ভুয়ো সংস্থা (শেল কোম্পানি) খোলা হয়েছিল। জিএসটি জালিয়াতিতেও কলকাতার লোকেরা দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানাকে পিছনে ফেলে দিচ্ছেন।’’
কী ভাবে হয় এই জালিয়াতি?
রাজস্ব দফতরের কর্তাদের ব্যাখ্যা— ধরা যাক, কোনও পণ্যে জিএসটি ১০০ টাকা। তার কাঁচামালে আগে মেটানো কর হিসেবে ৭০ টাকা ফেরানো হলে জিএসটি ৩০ টাকা দিলেই হয়। ওই ৭০ টাকা ফেরত মেলে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট হিসেবে। বহু সংস্থা কাঁচামাল কেনার জাল বিল জমা করে আরও বেশি টাকা হাতাচ্ছে। সেই বিলের জোগান দিতে ভুয়ো সংস্থা তৈরি হচ্ছে। সেগুলি রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ়ে নথিভুক্তিও হয়ে যাচ্ছে।
আজ অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর থেকেও চিন্তার কারণ হল, যেখানে কোনও পণ্যে জিএসটির থেকে কাঁচামালে মেটানো জিএসটি বেশি। সে ক্ষেত্রে টাকা ফেরত নয়, কেন্দ্রের ঘর থেকে বাড়তি যাচ্ছে।’’ উত্তরাখণ্ডে এমন ভুয়ো সংস্থার খোঁজ মিলেছে। যা খোলা হয়েছে হাওয়াই চপ্পলের কাঁচামাল তৈরির নামে। তাতে জিএসটি দিতে হয় ১৮%। ওই সংস্থার থেকে গুজরাত, তামিলনাড়ুর বহু সংস্থা কাঁচামাল কিনে চপ্পল বানিয়েছে বলে দাবি। চপ্পলে জিএসটি ৫%। ফলে ৫% হারে কর মিটিয়ে তারা ১৮% হারে মেটানো কর ফেরত চাইছে। চলতি অর্থবর্ষে ২৭ হাজার সংস্থা এ রকম প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা রিফান্ডের দাবি করেছে। এর মধ্যে রাজস্ব দফতরের জালে ধরা পড়েছে ৯৩১টি জাল জিএসটি ছাড়ের দাবি।