দুই দেশীয় সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ রাজ্যে লগ্নি করেছিল সিঙ্গাপুরের সংস্থা কেপেল ল্যান্ড। রাজারহাটের ‘অ্যাকশন এরিয়া ৩’-এ আবাসন ও বাণিজ্যিক প্রকল্প গড়তে জাটিয়া ও পূর্বাঙ্করা গোষ্ঠীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল তারা। তৈরি করেছিল যৌথ সংস্থা কেপেল মেগাস ডেভেলপমেন্ট (কেএমডি)। কিন্তু প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শেষ করে তা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় তারা। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৫০ কোটিরও বেশি টাকায় ওই যৌথ সংস্থা কেএমডি-কে কিনে নিল কলকাতারই তিন নির্মাণ সংস্থার (সুরেকা, মার্লিন ও জেবি) কনসোর্টিয়াম। তারা জানিয়েছে, বাকি দুই পর্যায়ের কাজ শেষ করতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বছর ছয়েক আগে রাজারহাটের ‘অ্যাকশন এরিয়া ৩’-এ ২৫ একর জমিতে ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা’ প্রকল্প শুরু করে কেএমডি। যার অন্যতম অংশীদার ছিল কেপেল ল্যান্ড। এর আগে সিঙ্গাপুর ছাড়াও চিন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও তাইল্যান্ডে বিনিয়োগ করেছে তারা। ভারতেও দু’টি প্রকল্প গড়েছে বেঙ্গালুরুতে। প্রথম পর্যায়ে সাতটি টাওয়ারের প্রায় ১০ লক্ষ বর্গ ফুটের আবাসন প্রকল্প গড়েওছিল কেএমডি। কিন্তু এখন সেই সংস্থাকেই কিনে নিল এই শহরেরই তিন গোষ্ঠী সুরেকা, মার্লিন এবং জেবি-র কনসোর্টিয়াম। মার্লিন গোষ্ঠীর এমডি সুশীল মোহতার দাবি, কেএমডি-র ‘ছেড়ে যাওয়া’ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দক্ষতা তাঁদের রয়েছে।
কিন্তু এ রাজ্যে প্রকল্প থেকে কেন সরে যাচ্ছে কেপেল এবং দেশের দুই গোষ্ঠী? অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যে শিল্পায়ন তলানিতে। আর্থিক কর্মকাণ্ডের সুযোগও সীমিত। ফলে ফ্ল্যাটের (বিশেষত দামী ফ্ল্যাট বা বাড়ির) চাহিদায় ভাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার উপর রাজারহাট এলাকায় সিন্ডিকেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গোলমাল লেগে রয়েছে প্রায় প্রতিদিনই। প্রকল্প থেকে সরার পিছনে এগুলি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে ই-মেলে জানতে চাওয়া হলে কেপেল মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, সংস্থা মনে করেছে এ ক্ষেত্রে প্রকল্পে নিজেদের অংশীদারি বিক্রি করে দেওয়াই সঠিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতেও ভারতে উপযুক্ত সুযোগের সন্ধানে থাকবেন তাঁরা।
মোহতারও দাবি, যে কোনও ব্যবসারই নানা সমস্যা থাকে। সে সব সমাধান করেই তাতে এগোতে হয়। তাঁর মতে, বরং নির্মাণ শিল্পে এ ধরনের পদক্ষেপ স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে মোহতার দাবি, তাঁরাও এ রকম ভাবে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় লগ্নি স্থানান্তরিত করেছেন। এক জায়গায় আটকে থাকা নির্মাণ শিল্পের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়।
মোহতার যুক্তি, গত দু’তিন বছরে রাজারহাটে রাস্তা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি বেড়েছে। ফলে আর্থিক কর্মকাণ্ড বা পরিকাঠামোর অভাবের যুক্তিতে কোনও লগ্নিকারীর সরার কথা নয়।
প্রকল্পের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আরও ১৩ লক্ষ বর্গ ফুটের আবাসন এবং ১.১০ লক্ষ বর্গ ফুটের বাণিজ্যিক প্রকল্প গড়বে নয়া কনসোর্টিয়াম। ন’টি টাওয়ারের আটটিই হবে আবাসন প্রকল্পের। সম্ভাব্য লগ্নি প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে তিন বছরে পাঁচটি টাওয়ারে ৪০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এখানে ভাল গুণমানের আবাসন তৈরিতে সমস্যা হবে না বলে মনে করেন সুরেকা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর প্রদীপ সুরেকাও।