ক্ষুদ্র শিল্পের অভাবে যন্ত্রাংশ জোগানে ঘাটতি

শহরে পাখা কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করছে খেতান

পাখা তৈরির যন্ত্রাংশ সস্তায় মেলায় কলকাতা থেকেই গোটা ভারতে ব্যবসা ছড়িয়েছিল খেতান ইলেকট্রিক্যালস। আজ সেই সংস্থাই যন্ত্রাংশের জোগান কমায় কলকাতা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পাকাপাকি ভাবে ব্যবসা সরাচ্ছে হায়দরাবাদের কারখানায়। দীর্ঘদিন লোকসানে চলায় নভেম্বরে কলকাতার কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেওয়ার পরে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেয় সংস্থা। গত এপ্রিল থেকে শুরু হয় হায়দরাবাদে উৎপাদন স্থানান্তরের কাজ।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:১০
Share:

পাখা তৈরির যন্ত্রাংশ সস্তায় মেলায় কলকাতা থেকেই গোটা ভারতে ব্যবসা ছড়িয়েছিল খেতান ইলেকট্রিক্যালস। আজ সেই সংস্থাই যন্ত্রাংশের জোগান কমায় কলকাতা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পাকাপাকি ভাবে ব্যবসা সরাচ্ছে হায়দরাবাদের কারখানায়। দীর্ঘদিন লোকসানে চলায় নভেম্বরে কলকাতার কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেওয়ার পরে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেয় সংস্থা। গত এপ্রিল থেকে শুরু হয় হায়দরাবাদে উৎপাদন স্থানান্তরের কাজ।

Advertisement

যে-রাজ্যে ক্ষুদ্রশিল্পের রমররমার দাবি করে চলেছে সরকার, যন্ত্রাংশ শিল্পের অভাবেই সেখানে কলকাতা ছাড়ছে সংস্থা। শিল্পমহলের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যে ছোট ও মাঝারি শিল্পেরও যে করুণ দশা, সেটাই আরও একবার স্পষ্ট করে দিচ্ছে এই ঘটনা। কারণ যন্ত্রাংশ জোগান দেয় ক্ষুদ্রশিল্পই। পাশাপাশি উঠে আসছে বড় শিল্পের প্রয়োজনীয়তার যুক্তিও। কারণ শিল্পের টানেই শিল্প আসে। এবং বড় শিল্প সেখানে অনুঘটকের কাজ করে। বড় শিল্প না-থাকলে চাহিদা কমে সহযোগী ছোট শিল্পের পণ্যেরও। যার অভাবে পাততাড়ি গোটাতে হয় খেতান-এর মতো সংস্থাকে।

বস্তুত, শিল্পমহলের যুক্তিকে সমর্থন করছে সংস্থাটির কর্ণধার সুনীল খেতানের বক্তব্যও। তাঁর দাবি, পাখা তৈরির প্রয়োজনীয় বহু যন্ত্রাংশই অন্য বড় শিল্পেরও কাজে লাগে। তাই বড় শিল্পের সংখ্যা বাড়লে, ব্যবসা ছড়ায় সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্পও। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে কম দামে যন্ত্রাংশ মেলে। এ রাজ্যে বড় শিল্প ও সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্প থাকলে সেই সুবিধা পেত পাখা শিল্পও, যা মিলছে সংস্থার হায়দরাবাদের কারখানায়।

Advertisement

রাজস্থান থেকে কলকাতায় এসে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবসা শুরু করেছিলেন শ্রী কৃষ্ণ খৈতান। এরপর বাজারে আনেন নিজের ব্র্যান্ডের ডিসি-ফ্যান ‘ব্রিজি’। ’৮০-র দশকে সূত্রপাত খেতান ইলেকট্রিক্যালস-এর। গৃহস্থালির ব্যবহারের জন্য ছাড়াও শিল্পের উপযোগী ফ্যান কলকাতা ও হায়দরাবাদের কারখানায় তৈরি করত সংস্থাটি।

সুনীলবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকার হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যে উৎপাদন শুল্কে ছাড় দেওয়ায় প্রতিযোগী পাখা সংস্থাগুলি সেখান থেকে কম খরচে পাখা তৈরি করছিল। কিন্তু তাঁদের উত্তর ভারতে কোনও কারখানা না-থাকায় সেখান থেকে যন্ত্রাংশ এনে কলকাতার কারখানায় পাখা তৈরির খরচ বাড়ছিল। হায়দরাবাদে ওই যন্ত্রাংশ আনার সুবিধা মিলবে না। তবে যন্ত্রাংশ শিল্পের রমরমার জন্য হায়দরাবাদে পাখা তৈরির খরচই কলকাতার চেয়ে অন্তত তিন-চার শতাংশ কম বলে তাঁর দাবি। সুনীলবাবু জানান, কলকাতায় পাখা তৈরি করতে উত্তর ভারত থেকে প্রায় ৫৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ আনতে হয়। কিন্তু হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্য থেকে যন্ত্রাংশ আসে মাত্র ২০ শতাংশ। বাকিটা মেলে স্থানীয় যন্ত্রাংশ শিল্পের কাছ থেকে।

কলকাতায় সংস্থা দৈনিক ২,০০০ পাখা তৈরি করত। হায়দরাবাদে হয় ৪,০০০। আগামী দিনে হায়দরবাদে উৎপাদন বেড়ে হবে ৬,০০০। উপরন্তু, পাখার বাজারে পূর্বাঞ্চলের অংশীদারি মাত্র ২২%। বরং দক্ষিণ ভারতে তা প্রায় ৩০%। অর্থাৎ, তাঁর দাবি, কলকাতায় উৎপাদন খরচ বেশি কিন্তু বাজার কম। বরং কম খরচে পাখা তৈরি করে দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তর বাজারে সহজে পৌঁছলে লাভের অঙ্ক বাড়বে। তাই বছর দুয়েক আগেই কলকাতার কারখানা হায়দরাবাদে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়। সুনীলবাবুর আশা, এতে ২০১৭-য় ফের লাভের মুখ দেখবে তাঁর সংস্থা।

গত নভেম্বরে কলকাতার কারখানা বন্ধের সময়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন কর্মীদের অনেকে। যদিও সুনীলবাবুর দাবি, নিয়ম মেনেই কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পাওনাগণ্ডা মেটানোর পাশাপাশি ইচ্ছুক কর্মীদের হায়দরাবাদে বদলির প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

তবে কলকাতা থেকে সরছে না সংস্থার সদর দফতর। ভবিষ্যতে রাজ্যে ফিরে আসার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেননি সুনীলবাবু। যদি সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয় ও উৎপাদন বাড়ানোর প্রয়োজন হয়, তা হলে ফের এ রাজ্যে কারখানা খুলবেন বলে তাঁর আশ্বাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement