ছবি: সংগহীত
জীবনের প্রথম বেতন হাতে পেয়েই কোথাও একটা লগ্নি করা জরুরি। তাই সাত-পাঁচ না ভেবেই কিনে নিলেন জীবন বিমার একটি এনডাওমেন্ট প্রকল্প। বেশিরভাগ মানুষই যা করেন আরকি। নমিনি করলেন মা, কিংবা ভাই অথবা বোনকে। তার পর বছর বছর প্রিমিয়াম। পলিসির কাগজ কিন্তু পড়ে রয়েছে আলমারির লকারে। ইতিমধ্যেই আপনি বিয়ে করেছেন। হয়তো আলাদা পরিবার হয়েছে ভাই-বোনেদেরও। কিন্তু নমিনির নাম আর বদলানো হয়নি।
মা-বাবার বয়স হয়েছে। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য লগ্নি প্রকল্পের কাজকর্মের দায়িত্ব এখন আপনার হাতে। অথচ ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেটগুলিও পড়ে রয়েছে সেই লকারে। সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। সেগুলির অটো রিনিউয়ালও হয়ে গিয়েছে। হয়তো পরিবারের কেউই তা জানেন না।
শুনেছেন মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করলে মেওয়া ফলে ভাল। তাই বেশ কিছু টাকা ঢেলে রেখেছেন সেখানেও। তার পর বাজার উঠেছে, পড়েছে। কিন্তু সেই ফান্ডের খোঁজ আপনি আর রাখেননি। কোনও দিন হয়তো মোটা টাকার দরকার পড়ল। বার করলেন সেই কাগজ। কিন্তু দেখলেন রিটার্ন প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছয়নি।
এই তিনটি ঘটনাকে যদি পুরোপুরি কাল্পনিক ভাবেন, তা হলে কিন্তু ভুল করছেন। প্রায় সব পরিবারেই এক বার না এক বার এমনটা ঘটেছে। হয়তো বা একাধিক বারও। আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী কী ভাবে লগ্নি করা উচিত, তা নিয়ে আমরা অতীতে অনেক আলোচনা করেছি। কিন্তু সেই লগ্নির ইতিহাস-ভূগোল কী ভাবে মাথা থেকে খাতায় নামিয়ে ফেলা যায়, কী ভাবে নিয়মিত সেই লগ্নির হালহকিকত জানবেন এবং কেন সেটা জরুরি, সেই বিষয়টির দিকেও এ বার জোর দেওয়া প্রয়োজন। না হলে ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হতে পারে। আর কঠোর বাস্তবটা শুনবেন? আপনার অসুস্থতার সময়ে কিংবা অবর্তমানে কাছের মানুষদের যাতে সেই বিষয় আশয় হাতের কাছে পেতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করাও আপনার দায়িত্ব।
তাই যাবতীয় লগ্নি প্রকল্পের খুঁটিনাটি নিয়ে তৈরি করতে হবে একটি তথ্যভাণ্ডার। প্রকল্পগুলির খোঁজখবর রাখতে হবে নিয়মিত। কোন প্রকল্প কী ভাবে সামলাবেন, তা নিয়েই আজ সংক্ষেপে আলোচনা করব।
বিমা
জীবনের সঙ্গে বিমার যোগাযোগ অন্তরঙ্গ। এক জন লগ্নিকারী জীবন বিমা, চিকিৎসা বিমা, দুর্ঘটনা বিমা, গাড়ি বিমা-সহ বিভিন্ন ধরনের বিমা করে থাকেন। এক এক ধরনের বিমারও আবার রয়েছে রকমফের। তাই এর পোর্টফোলিও কী ভাবে গুছিয়ে রাখা যায়, তা নিয়ে শুরুতে আলোচনা করব আমরা।
• পলিসি বন্ডে নমিনির নাম যাতে স্পষ্ট ভাবে থাকে এবং প্রয়োজনে যাতে সেই নাম বদলানো হয় তা নিশ্চিত করুন। একটু আগেই যা বলছিলাম। ধরা যাক সংশ্লিষ্ট লগ্নিকারী বিয়ের আগে একটি জীবন বিমা করিয়েছেন। সেখানে নাম রয়েছে পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের। অথচ বিয়ের পরেও নমিনির নাম বদল করলেন না। এর পরে কোনও অঘটন হলে নির্ভরশীল সদস্যের হাতে টাকা পৌঁছনো কিন্তু ততটা মসৃণ না-ও হতে পারে।
• আরও একটা ভুল আমরা করি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন বিমা প্রকল্পগুলির সময়সীমা শেষ হয়ে আসে। সেই টাকা তুলে আমরা অন্য কোনও কাজে লাগিয়ে ফেলি। বিমার সংখ্যা এবং কভারেজের অঙ্ক কমে আসে। অথচ যুক্তি বলে, ওই বয়সেই জীবন বিমার প্রয়োজনীয়তা বেশি। আপনার কাছের মানুষদের সুরক্ষিত করার জন্য। তাই বেশি বয়সে যেন আপনাকে বিমাহীন হতে না হয়।
• সাম্প্রতিক কালে একাধিক রাজ্যের বন্যা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। বহু মানুষ সেই সময়ে হারিয়েছেন লগ্নির কাগজপত্র। সুতরাং, খাতায় লিখে রাখা বাধ্যতামূলক ঠিকই, কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়। আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল আকারে লগ্নির তথ্যপুঞ্জিকে সুরক্ষিত করাও জরুরি। যাতে কোনও ভাবেই সেই তথ্য হাতছাড়া না হয়।
• শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বাড়িতে চুরি-সহ লগ্নির নথি হারাতে পারে অনেক ভাবেই। তাই সেই তথ্য রেখে দিন স্মার্টফোনে। সেই ফোন খারাপ হলে বা চুরি গেলে তথ্য থেকে যাবে গুগল ড্রাইভের মতো ক্লাউড পরিষেবা বা ভারত সরকারের ডিজিটাল লকারে। শুধু অবশ্য লগ্নির তথ্য নয়, এই পথে আপনি নিশ্চিত করতে পারেন সরকারি পরিচয়পত্র-সহ যাবতীয় নথি।
• রোজগারের অনুপাতে যেন জীবন বিমা যথেষ্ট করানো থাকে তা নিশ্চিত করুন। চেষ্টা করুন একটি টার্ম পলিসি করে রাখতে।
• পলিসিগুলি কী অবস্থায় রয়েছে তা সময়ে সময়ে দেখে নিন।
• অবশ্যই চেষ্টা করুন ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা এবং ক্রিটিক্যাল ইলনেস পলিসি করে রাখতে।
চিকিৎসা বিমা
• পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা বিমা তো থাকতেই হবে। কিন্তু দু’বছর পর পর সেগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখুন। সব কিছুর সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবার খরচও বাড়ছে। হয়তো বা মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় একটু বেশি হারেই। তাই সেই অনুযায়ী কভারেজ বাড়ানোরও চেষ্টা করুন।
• দরকারে করান টপ আপ পলিসি। তাতে কম খরচে চিকিৎসা বিমার কভারেজ বাড়বে।
• অসুস্থতা জানান দিয়ে আসে না। তাই কী ভাবে ক্যাশলেস পদ্ধতির সুবিধা নেবেন, সে সম্পর্কে সব সময়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। আপনি ছাড়াও পরিবারের আরও অন্তত এক জন সদস্য যেন সেই পদ্ধতি সবিস্তার জেনে রাখেন।
পিএফ এবং পিপিএফ
• নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পিএফ তহবিলের হালহকিকত জানুন।
• যদি কখনও চাকরি বদল করেন, তা হলে ইতিমধ্যে তৈরি হওয়া পিএফ তহবিল নতুন পিএফ অ্যাকাউন্টে সরিয়ে আনুন।
• যদি একটির বেশি অ্যাকাউন্ট তৈরিও হয় তা হলেও সেগুলিকে ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নাম্বারের (ইউএএন) ছাতার তলায় নিয়ে আসুন।
• প্রত্যেক অর্থবর্ষে অন্তত এক বার পিপিএফে টাকা রাখা বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারে যেন ভুল না হয়। তাই চেষ্টা করুন অর্থবর্ষের শুরুতে, অর্থাৎ, এপ্রিলেই একটি আমানত জমা করে দিতে। সে ক্ষেত্রে মিলবে গোটা বছরের সুদও।
• পিপিএফ প্রকল্পের মেয়াদ ১৫ বছর হয়। তা কবে শেষ হচ্ছে, সেই তারিখও বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জিতে লিখে রাখুন। মেয়াদ শেষ হলে তা পাঁচ বছর করে বাড়ানোর সুযোগ পাওয়া যায়। আপনি কি মেয়াদ শেষে তহবিল তুলে প্রকল্প বন্ধ করে নিতে চান? নাকি চান মেয়াদ বাড়িয়ে আরও বড় তহবিল গড়তে? যা-ই করুন না কেন, ভাল করে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দেখে নিন সামনে কী কী আর্থিক পরিকল্পনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করুন।
• প্রত্যেক অর্থবর্ষের শেষে পিপিএফের পাশবই আপডেট করুন। আয়কর আইনের ৮০সি ধারায় এই প্রকল্পে করছাড় পাওয়া যায়। রিটার্ন জমা করার সময়ে সেই সুবিধা নিন।
ফিক্সড ও রেকারিং ডিপোজিট
প্রতিবেদনের শুরুতে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছিলাম। ছোট-বড় অঙ্কের অজস্র ফিক্সড ডিপোজিট করা এবং তার পরে ম্যাচিওরিটির তারিখ মনে রাখতে না পারা বহু পরিবারের নিয়মিত ঘটনা। বস্তুত, এগুলি মাথায় রাখা সম্ভবও নয়। তাই সমস্ত ফিক্সড ডিপোজিট এবং সেই সঙ্গে রেকারিং ডিপোজিটের একটি তথ্য সারণি তৈরি করতে হবে। কী কী থাকতে হবে সেখানে? দেখে নিন তালিকা। (এফডির তথ্য)
একই সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
• এই সমস্ত আমানতের নমিনি সংক্রান্ত তথ্য যেন ঠিক থাকে।
• তালিকা তৈরির সুবিধা হল, কবে প্রকল্পটি ম্যাচিওর করছে তার হাতেগরম তথ্য থাকবে আপনার সামনে। কিন্তু সেই তথ্যভাণ্ডার নিয়মিত খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রকল্প ম্যাচিওর করার পরে আপনার সামনে দু’টি রাস্তা খোলা রয়েছে। প্রথমত, ব্যাঙ্ক-কে নির্দিষ্ট নির্দেশ না দিলে আপনাআপনি সেই তহবিল আবার বিনিয়োগ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, সেই তহবিল ভাঙিয়ে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করার নির্দেশ দিতে পারেন। আমার মতে দ্বিতীয়টিই বেশি ভাল। সে ক্ষেত্রে কোন মেয়াদের সুদ কত, সেটা বুঝে ফের নতুন ফিক্সড ডিপোজিট করার সুযোগ থাকবে আপনার হাতে।
• কোনও কারণে মেয়াদের আগে সার্টিফিকেট ভাঙালে সুদ কিছুটা কাটা যায়। তবে ক্ষতি যাতে কম হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মিউচুয়াল ফান্ড
সরাসরি কিংবা এসআইপির মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির প্রবণতা গত কয়েক বছরে বেড়েছে। ধ্রুপদী লগ্নি পদ্ধতির পাশাপাশি এই ধরনের লগ্নি অস্ত্রকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন লগ্নিকারীরা। উদ্দেশ্য একটাই— দীর্ঘ মেয়াদে বড় তহবিল তৈরি। কিন্তু কোন ধরনের ফান্ডে লগ্নি করবেন আপনি? সেটা আবার নির্ভর করছে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার উপর। যদি আপনি নিয়মিত রিটার্নের পাশাপাশি পুঁজির সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে চান, তা হলে আপনার অবশ্যই লগ্নি করা উচিত ঋণপত্র নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড বা ডেট ফান্ডে। আর কিছুটা ঝুঁকি নিতে পারলে নিশ্চিত ভাবেই ইকুইটিতে। কিন্তু ফান্ডের বাজারে তো রয়েছে রয়েছে হরেক কিসিমের প্রকল্প। তা হলে লগ্নি করবেন কোনটিতে? যদি লগ্নি পরামর্শদাতা কেউ থাকে তো ভাল। না হলে নিজের উদ্যোগে কিছু গবেষণা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রকল্পের তুলনা
একটি ফান্ড দেখে পুরো বাজারের পরিস্থিতি বিচার করা সম্ভব নয়। সে কারণে একই গোত্রের কয়েকটি ফান্ডের তালিকা তৈরি করুন। নিজের ফান্ডটির পাশাপাশি সেগুলির পারফরম্যান্সের দিকে নিয়মিত নজর রাখলে তুলনার কাজটা সহজ হবে।
ফান্ডের অতীত
প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ডের হ্যান্ডবুকে লেখা থাকে, অতীতের পারফরম্যান্স কখনওই ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় না। আসলে সেটাই স্বাভাবিক। মিউচুয়াল ফান্ডের পারফরম্যান্স যে সমস্ত শর্তের উপর নির্ভর করে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল অর্থনীতি এবং বাজারের পরিস্থিতি। যা এক এক সময়ে হতে পারে এক এক রকম। তবে অতীত দেখে একটা ব্যাপার বিচার করা অবশ্যই সম্ভব। তা হল বাজারের কোন পরিস্থিতিতে আপনার ফান্ডটি কী রকম ফল করেছে। রিটার্নের ধারাবাহিকতা অনেকটা নির্ভর করে ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতার উপরেও। এই সব খতিয়ে দেখলে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির এবং বেশি রিটার্নের ফান্ড বেছে নিতে সুবিধা হয়।
ফান্ডের ঝুঁকি
বাজারের পরিস্থিতির নিরিখে সব মিউচুয়াল ফান্ডেই কিছুটা করে ঝুঁকি থাকে। ফান্ড সংস্থার কাজ সেই সম্ভাব্য ঝুঁকিকে কমিয়ে যতটা সম্ভব বেশি রিটার্ন নিশ্চিত করা। এই ক্ষেত্রে আপনার তালিকায় থাকা কোন ফান্ড কতটা এগিয়ে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
সূচকের নিরিখে
বিএসই সেনসেক্স, বিএসই-২০০, নিফ্টির মতো সূচকগুলিই শেয়ার বাজারের মাপকাঠি (বেঞ্চমার্ক)। কোন ফান্ড কেমন পারফরম্যান্স করছে বা কেমন রিটার্ন দিচ্ছে, তার বিচার মূলত করা হয় এই সূচকগুলির অবস্থানের উপর। যখন বাজার নীচের দিকে থাকে তখনও কিন্তু কোনও ভাল ফান্ডের রিটার্ন এই সমস্ত সূচকের তুলনায় খারাপ হওয়া প্রত্যাশিত নয়।
ফান্ড ম্যানেজার
আমরা সকলেই জানি, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুঁজির বাজার ওঠানামা করে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলিও তাদের তহবিল লগ্নি করে তার উপর ভিত্তি করে। ধরা যাক, কোনও ফান্ড তার তহবিলের ৫০% খাটায় ইকুইটিতে, বাকি অর্ধেক ঋণপত্রে। শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি যখন ভাল থাকে তখন সেই কৌশলে বদল ঘটতে পারে। অনুপাত বদলে গিয়ে ৬০:৪০ হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে যেমন রিটার্ন বাড়ার সম্ভাবনা বাড়ে, তেমনই বাড়ে ঝুঁকিও। এই বিষয়গুলি সামলানো পুরোপুরি নির্ভর করে ফান্ড ম্যানেজারের মুন্সিয়ানার উপর। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফান্ড ম্যানেজার বদলালেও তহবিল লগ্নির কৌশল বদলাতে পারে। আবার লগ্নির কৌশলে পরিবর্তনের ফলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফান্ডের পুরনো বৈশিষ্ট বদলে যায়। এই সব পরিবর্তনের দিকেও নজর রাখা জরুরি।
নিয়মিত নজর
ফান্ডগুলির দিকে নিয়মিত নজর তো রাখতেই হবে। কিন্তু নিয়মিত মানে কত দিন অন্তর? এক দিন? এক সপ্তাহ? তা কিন্তু একেবারেই নয়। এতক্ষণ পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বললাম, মোটামুটি ভাবে ছ’মাস অন্তর সেগুলি খতিয়ে দেখা জরুরি। আসলে অল্প সময়ের ব্যবধানে ফান্ডের ন্যাভ, রিটার্ন বা অন্যান্য তথ্য দেখতে থাকলে তার পারফরম্যান্স ঠিক ভাবে বোঝা যায় না। কারণ এই ধরনের প্রকল্পের উদ্দেশ্যই সুদূরপ্রসারী। অল্প সময়ে বদলটা স্পষ্ট হয় না।
রেকর্ড সংরক্ষণ
• প্রত্যেক মাসেই ফান্ড হাউসগুলি ফান্ডের পোর্টফোলিও প্রকাশ করে। কোন সিকিউরিটিতে কতটা পুঁজি লগ্নি করা হচ্ছে, তা-ও লেখা থাকে সেখানে। থাকে অন্যান্য তথ্যও। আপনার মিউচুয়াল ফান্ডগুলির জন্য আলাদা একটি ফাইল তৈরি অন্যান্য নথির সঙ্গে এগুলিও ভাল ভাবে রেখে দিন সেখানে। সেই সঙ্গে খুঁটিয়ে পড়ে নিন লগ্নি সংক্রান্ত তথ্যগুলি।
• কোনও মাসে ফান্ডে লগ্নি হলে পরের মাসে লগ্নিকারী কনসলিডেটেড অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট (সিএএস) পান। কোনও লেনদেন না হলে পান ছ’মাস অন্তর। সেখানে তাঁর লগ্নি সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য থাকে। বোঝা যায় রিটার্নের পরিস্থিতিও। সেটি ভাল ভাবে দেখা এবং সংরক্ষণ করা জরুরি।
• কোনও কোনও সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের মূল বৈশিষ্টে বদল হয়। সে ক্ষেত্রে ইমেলের মাধ্যমে লগ্নিকারীকে জানানো হয় সেই সংক্রান্ত তথ্য। প্রকল্পের পারফরম্যান্সের উপরে তার প্রভাব পড়তে পারে। তখন সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।
হাতে আছে ইন্টারনেট
এত কিছুর পরে হাতের কাছে ইন্টারনেট তো আছেই। যাকে লগ্নি সংক্রান্ত তথ্যের খনি বলা যেতে পারে। এমন বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট একটি মিউচুয়াল ফান্ডের পাশাপাশি একই গোত্রের অন্যান্য প্রকল্পের সবিস্তার তথ্য থাকে। তা ছাড়া কোনও লগ্নি পরামর্শদাতার মাধ্যমে বিনিয়োগ করলেও সেই সংস্থা থেকেও আপনার প্রকল্প সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য পেতে পারেন।
এই সমস্ত প্রকল্পের পাশাপাশি সরাসরি শেয়ারেও লগ্নি করতে পারেন আপনি। সে ক্ষেত্রেও তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করতে হবে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো। তবে যেহেতু এই ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই তথ্য খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও হয় ঘন ঘন। পদ্ধতি অবশ্য প্রায় একই। এখানেও যেন নমিনি করে রাখতে ভুল না হয়। শেয়ার সংক্রান্ত নথি কোথায় রয়েছে, তা জানিয়ে রাখতে হবে পরিবারের নিকটতম সদস্যকে। একই ভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, এনপিএস-সহ অন্যান্য লগ্নি প্রকল্পের। লগ্নি করার আগে শর্ত দেখে নিতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে।
লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)