—প্রতীকী ছবি।
ফের মাসুল যুদ্ধের ইঙ্গিত। এ বারও তার শুরু রিলায়্যান্স জিয়োর হাত ধরে। তবে টেলিকম নয়, সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ের ময়দান হল ওটিটি (ওভার দ্য টপ), যেখানে ইন্টারনেটে ভর করে বিনোদনমূলক পরিষেবা দেয় সংস্থাগুলি। আর এই ক্ষেত্রেই এ বার নেটফ্লিক্স, অ্যামাজ়ন প্রাইম, জ়ি ৫, সোনি লিভের মতো জনপ্রিয় ওটিটি-র সঙ্গে পাল্লা দিতে আগ্রহী মুকেশ অম্বানীর সংস্থাটি। সে জন্য এক ধাক্কায় নিজেদের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জিয়ো সিনেমার পরিষেবার মাসুল এক তৃতীয়াংশ করল তারা।
২০১৬ সালে দেশে ৪জি পরিষেবা এনে মাসুল যুদ্ধের সূচনা করেছিল রিলায়্যান্স জিয়ো। যা পাল্টে দিয়েছিল ভারতের টেলিকম শিল্পের মানচিত্রকে। একাধিক সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করা এবং সংযুক্তির হাত ধরে দেশে এখন মূলত চারটি টেলি সংস্থা রয়েছে। যাদের মধ্যে মাত্র দু’টি, জিয়ো এবং এয়ারটেল উন্নত প্রযুক্তির ৫জি পরিষেবা চালু করেছে। ভোডাফোন আইডিয়া এখনও তা আনতে পারেনি। আর বিএসএনএল ৪জি শুরু করতেই হিমশিম খাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিয়ো বাজারে আসার হাত ধরে শুধু ফোনের খরচই কমেনি, সস্তায় সংযোগ মেলায় বদলে গিয়ে মানুষের ফোন ব্যবহারের ধরন। সমাজমাধ্যম ছাড়াও নেট ভিত্তিক নানা পরিষেবা হাতের কাছে পাচ্ছেন তাঁরা। উৎসাহ বাড়ছে ফোনেই বিনোদনের বড় অংশের পরিষেবা নেওয়ার। ব্রাত্য হচ্ছে টিভি। এ বার সেখানেই বেশি করে পা ফেলছেন মুকেশ। এ জন্য ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এইচবিও-র মতো বহুজাতিক বিনোদন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি তারা আগেই করেছিল জিয়ো। দখলে নিয়েছিল আইপিএল দেখানোর স্বত্ব।
আর ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ওয়াল্ট ডিজ়নির ব্যবসাও হাতে নেওয়ার কথা জানায় তারা। ফলে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজ়নি প্লাস হটস্টার-এর পাশাপাশি স্টার প্লাস, স্টার গোল্ডের মতো বিনোদন ও স্টার স্পোর্টসের মতো খেলার চ্যানেল এসেছে জিয়োর ঝুলিতে। ডিজ়নির সঙ্গে নতুন সংযুক্ত সংস্থাটির হাতে থাকবে ১২০টিরও বেশি চ্যানেল, দু’টি ওটিটি অ্যাপ (ডিজ়নি প্লাস হটস্টার ও জিয়ো সিনেমা), ডিজ়নির ৩০,০০০-এর বেশি অনুষ্ঠানের লাইসেন্স, ভারতে তাদের সিনেমা ডিস্ট্রিবিউশনের ছাড়পত্র।
আর এই বাজারেই আরও বেশি করে ঝাঁপাতে এ বার জিয়ো সিনেমার মাসুল মাসে ৯৯ টাকা থেকে কমিয়ে ২৯ টাকা করেছে মুকেশের সংস্থা। চার জনে একসঙ্গে দেখতে চাইলে দিতে হবে মাসে ৮৯ টাকা। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, জিয়োর এই পদক্ষেপে চাপ বাড়বে নেটফ্লিক্সের উপরে, যাদের ন্যূনতম মাসুল ১৪৯ টাকা। অ্যামাজ়ন প্রাইমের ক্ষেত্রে বছরে হাজার দেড়েক টাকা দিয়ে ওটিটি ছাড়াও একাধিক পরিষেবা মেলে ঠিকই। কিন্তু বাড়তি অনেক কিছু দেখতে গেলে দিতে হয় আলাদা মাসুল। তা ছাড়া জ়ি ৫, সোনি লিভ-এর মতো ওটিটি পরিষেবার ক্ষেত্রেও লাগে তুলনায় বেশি অর্থ। ফলে জিয়োর পদক্ষেপে সব মিলিয়ে দেশের নেট বিনোদনের জগতে মাসুল যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত মিলছে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।