প্রতীকী ছবি
আমপানের চার দিন পরেও বিদ্যুৎ-জলহীন রাজ্যের বহু জায়গা। বাড়ছে রোষ। ফুঁসতে থাকা মানুষ রবিবারেও পথে নেমে প্রতিবাদ-অবরোধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সিইএসসি, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তবে রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি যে রকম ভয়ঙ্কর, তাতে পরিষেবা পুরো ঠিক হতে আরও বেশ কিছু দিন লাগবে। দিন-রাত কাজ চলছে। বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির কিছু অঞ্চলে রবিবার থেকে ন্যূনতম সংযোগটুকু চালু করা গিয়েছে। আগের তুলনায় অবস্থা অনেকটা সামলে ওঠার দাবি করছে সিইএসসি-ও। বেশ কিছু জায়গায় শনিবার রাতে ও রবিবার সকাল থেকে পরিষেবা চালু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।
ঝড়ে বিপর্যস্ত জেলাগুলিতে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষকে ধৈর্য ধরার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত অবস্থা সামলাতে বলেছেন সিইএসসি-কেও। নিজে ভিক্টোরিয়া হাউসে গিয়ে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে কাজের তদারকি করেছেন। সূত্রের খবর, এতেই সব স্তরে তৎপরতা বেড়েছে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা নিয়ে।
বণ্টন সংস্থার শীর্ষকর্তারাও বলছেন, লকডাউনে এমনিতেই তাঁদের লোকসান হয়েছে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা। আমপানে তা আরও দেড় গুণ বাড়ার আশঙ্কা। তবে নবান্নের বার্তা, অর্থের কথা না-ভেবে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে হবে। বিদ্যুৎ দফতর অবশ্য জানিয়েছে, কলকাতা ও শহরতলিতে বণ্টন সংস্থার অনেক জায়গায় আলো ফিরেছে। যার মধ্যে গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, নিউটাউন, বারাসতের কিছু অঞ্চল ছাড়াও আছে তমলুক, এগরা, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট ইত্যাদি। সিইএসসি সূত্রের দাবি, বিদ্যুৎ এসেছে যাদবপুর, সেলিমপুর, মুকুন্দপুর, রাশবিহারী, লেকটাউন, নাগেরবাজারের মতো এলাকায়। তবে এখনও যাঁরা আলো-জলহীন হয়ে রয়েছেন, ক্ষোভে ফেটে পড়তে পড়তে তাঁদের প্রশ্ন, এই ভোগান্তির দায় কার?
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, লোকের অভাবেই কাজে সমস্যা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রাখতে হচ্ছে। তাই একসঙ্গে অনেক কর্মীকে আনা যাচ্ছে না। যানবাহনও চলছে না তেমন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বহু অঞ্চলে কর্মীরা পৌঁছতে পারছেন না।
তবে বিদ্যুৎ ভবনে জমা পড়া প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ৭টি জেলায় ভেঙে পড়া অন্তত ৩ লক্ষ খুঁটি ও টাওয়ারকে ফের খাড়া করে একাংশে পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সারানো হয়েছে ১১ কেভির ২৩০টি সাবস্টেশন। ৪০% হাইটেনশন লাইন গত দু’দিনে টাওয়ারে তোলাও গিয়েছে। সেখান থেকে লো-টেনশন লাইনে বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যদিও তা অন্ধকারে ডুবে থাকা অঞ্চলের তুলনায় সামান্যই।
আর সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষের দাবি, কলকাতায় ৯২% জায়গাতেই বিদ্যুৎ ফিরেছে। বাকি অঞ্চলে কর্মী বাড়িয়ে দ্রুত কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশন, বড় আবাসনে জেনারেটরও ব্যবহার করা হচ্ছে। মঙ্গলবারের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।