বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ। — ফাইল চিত্র।
লাভ ঘরে তোলার তাগিদে শুক্রবার বাজার (৬৫২) পড়লেও, তার সাম্প্রতিক দৌড়ে লগ্নিকারীরা খুশি। টানা পাঁচ দিন বেড়ে বৃহস্পতিবার সেনসেক্স থেমেছিল ৬০,২৯৮ অঙ্কে। সর্বোচ্চ শিখর (৬১,৭৬৬) থেকে মাত্র ১৪৬৮ পয়েন্ট নীচে। গত দু’মাসে উত্থান ৮৯৩৮। শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা নিশ্চিন্ত, তাঁদের পুঁজি বাড়ছে। কিন্তু বিমর্ষ সুদ নির্ভর মানুষ, বিশেষত প্রবীণেরা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় তারা) তিন দফায় মোট ১৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোয় ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ বাড়ছে লাফিয়ে। কিন্তু আমানতের সুদ তার ধারেকাছেও আসেনি। তুলনায় একটু বেড়েছে ছোট থেকে মাঝারি মেয়াদে। বড় মেয়াদে নামমাত্র।
এখন স্টেট ব্যাঙ্ক ২ বছরের জমায় সুদ দিচ্ছে ৫.৫%। প্রবীণরা পাবেন ৬%। ৫ বছর ও তার বেশি হলে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ৫.৬৫%, প্রবীণদের ৬.৪৫%। ৪০৫ দিনের জমায় পঞ্জাবন্যাশনাল ব্যাঙ্ক প্রবীণদের সুদ দিচ্ছে ৬.৬০%। বেশি মেয়াদে টাকা রাখলে এই হার কমে যাবে। বেসরকারি ব্যাঙ্কে আমানতে নতুন সুদ বেশি। যেমন, আইসিআইসিআই এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে প্রবীণরা সর্বাধিক পেতে পারেন ৬.৬%। তবে ছোট কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক ৭%-৭.৫০% সুদ দিচ্ছে। এদেরমধ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তফসিলভুক্ত (শিডিউলড ব্যাঙ্ক) ব্যাঙ্কগুিলতে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখা যেতে পারে, যা ডিপোজ়িট ইনশিয়োরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন দ্বারা গ্যারান্টি প্রদত্ত। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক উঠে গেলে ৫ লক্ষ পর্যন্ত পাবেন আমানতকারী।
চলতি মাসে রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পরে কিছু ব্যাঙ্ক ছোট মেয়াদের আমানতে ৪০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ বাড়িয়েছে। বড় মেয়াদে তা বড়জোর ১০ বেসিস পয়েন্ট। অথচ ৬.৬% সুদও এখন খুচরো ৬.৭১% মূল্যবৃদ্ধির হারের নীচে। প্রযোজ্য হারে কর ধরলে সুদ বাবদ প্রকৃত আয় আরও কম। প্রবীণদের চেয়ে ৫০-৮০ বেসিস পয়েন্ট কম পান সাধারণ গ্রাহক।
আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের ইঙ্গিত, আরও বাড়তে পারে রেপো রেট। সেটা হলে হয়তো ব্যাঙ্কের জমায় সুদ আর একটু বাড়বে। কারণ, সম্প্রতি ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের হাতে নগদ তহবিল কমেছে। ধার নেওয়ার প্রবণতা জারি থাকলে বেশি আমানত টানতে ব্যাঙ্কগুলিকে সুদ বাড়াতে হতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে। এখন তাই ছোট মেয়াদে টাকা রাখা যেতে পারে। জমানো যেতে পারে লিকুইড ফান্ডে কিংবা অল্প দিনের জন্য ব্যাঙ্কের লিকুই-ফিক্সড, অটো-সুইপ বা লিঙ্কড-এফডি অ্যাকাউন্টে। এগুলিতে ফিক্সড ডিপোজ়িটের মতো সুদ মেলে এবং প্রয়োজনে সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো জমা টাকা তুলেও নেওয়া যায়।
মূল্যবৃদ্ধির হার এবং রেপো যা-ই হোক, থমকে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ। ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পে এখনও তা (৬.৬%) খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারের নীচে। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের রিটার্ন সে ভাবে না বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন সেই সব মানুষ, যাঁরা তিন বছর এবং তারও আগে অবসর নিয়েছেন। তখন বেশি সুদে রাখা টাকা মেয়াদ শেষে হাতে আসার পরে নতুন করে রাখতে গিয়ে সুদ কমছে ১০০-২০০ বেসিস পয়েন্ট। অথচ পণ্যের দাম চড়া।
(মতামত ব্যক্তিগত)