২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প শেয়ার বাজারে লগ্নি করেছে মোট ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকা। প্রতীকী ছবি।
গত মাসে খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা মাথা নামানোর পরে মনে করা হয়েছিল, এ বার বুঝি শেয়ার বাজার তেতে উঠবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং গত কয়েক দিন বাজার ঝিমিয়েই। এর কারণ কী?
২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি তেমন আশার আলো দেখাতে পারেনি। সে কারণে টিসিএস, ইনফোসিসের মতো বড় সংস্থার শেয়ার দর পড়েছে। এ বছর বর্ষা কেমন হবে তা নিয়ে আশঙ্কায় অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ। এই বিষয়টিও সতর্ক রেখেছে লগ্নিকারীদের। আবহাওয়া দফতর অবশ্য মনে করছে বর্ষা স্বাভাবিক হবে। বড় মেয়াদের গড় বৃষ্টিপাতের ৯৬% থেকে ১০৪ শতাংশকে স্বাভাবিক বর্ষা বলে ধরা হয়। তবে এ বারের বর্ষা নিয়ে সমস্ত পক্ষ একমত নয়। যেমন, বেসরকারি সংস্থা স্কাইমেট মনে করে, এলনিনোর প্রভাবে ভারতে বর্ষা স্বাভাবিকের তুলনায় কম (৯৪%) হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার প্রভাব কৃষি উৎপাদন তথা গ্রামীণ অর্থনীতির উপরে পড়বে। এরই মধ্যে তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন অংশে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
মার্চে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার (৫.৬৬%) চলে এসেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সহনসীমার (২%-৬%) মধ্যে। এই হার গত ১৫ মাসে সবচেয়ে কম। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ৬.৪৪%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য এ বার একে ৪ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা। অনেক দিন পরে গত ঋণনীতিতে সুদ না বাড়িয়ে তা অপরিবর্তিত রেখেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তার পরে মার্চের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রকাশিত হওয়ায় এবং তা মাথা নামানোয় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হারও নেমেছে ১.৩৪ শতাংশে। যা ২৯ মাসের সর্বনিম্ন। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সতর্কবার্তা, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। সুদের হার বৃদ্ধিতে আপাতত বিরতি দেওয়া হলেও একে দাঁড়ি টানা বলে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। অদূর ভবিষ্যতে জিনিসপত্রের দাম ফের বাড়লে আবারও সুদ বাড়াতে হতে পারে। ফলে এপ্রিলে মূল্যবৃদ্ধি কোন পথে হাঁটে সে দিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তো বটেই, আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে শিল্পমহল এবং সাধারণ মানুষও। একই কারণে সতর্ক পদক্ষেপ করছেন লগ্নিকারীরাও।
এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংস্থাগুলির আর্থিক ফলাফল প্রকাশের মরসুম শুরু হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ইনফোসিসের নিট মুনাফা ৬১২৮ কোটি টাকায় পৌঁছলেও তা বাজারের প্রত্যাশাকে ছুঁতে পারেনি। চলতি অর্থবর্ষ সম্পর্কেও তেমন আশার বার্তা শোনাতে পারেনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। ফলে বড় অঙ্কের মুনাফা সত্ত্বেও সংস্থার শেয়ার দর মাথা নামিয়েছে। অন্য দিকে, দেশের বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের নিট লাভ ১৪.৭৫% বেড়ে পৌঁছেছে ১১,৩৯২ কোটি টাকায়। ১৯.৮% বেড়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১২,০৪৭ কোটি টাকা। দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের শেষ তিন মাসের মুনাফা পৌঁছেছে ১৯,২৯৯ কোটি টাকায়। যা এই সংস্থার সর্বকালীন রেকর্ড।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প শেয়ার বাজারে লগ্নি করেছে মোট ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকা। ফান্ডগুলি এত পুঁজি লগ্নি করায় অনেক সময়ে বাজার বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ফান্ডের লগ্নি কেমন হবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। লগ্নি টানতে গেলে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা থাকতে হবে। অন্য দিকে, ব্যাঙ্ক এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই বেশি ঝুঁকির রাস্তা ছেড়ে নিশ্চিত আয়ের পথে হাঁটতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। লগ্নিকারীদের শেয়ার বাজার বিমুখ করতে পারে সেটাও।
(মতামত ব্যক্তিগত)