—ফাইল চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধি এবং শেয়ার সূচকের গতি সব সময়েই বিপরীতমুখী। মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামালে আশা জাগে, সুদ কমবে। আর সুদ কমার আশায় চাঙ্গা হয় শেয়ার বাজার। যেমন হয়েছে গত মঙ্গলবার। ওই দিন সেনসেক্স এক লাফে বাড়ে ৪৬৫ পয়েন্ট।
এর আগে বাজার খবর পেয়েছিল খুচরো এবং পাইকারি, দুই বাজারেই কমেছে মূল্যবৃদ্ধির হার। ডিসেম্বরে খুচরো বাজারে তা নেমে এসেছে ২.১৯ শতাংশে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সব থেকে কম। একই মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৮ শতাংশ, যা ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর পরেই লগ্নিকারীদের মধ্যে আশা জেগেছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগামী দিনে সুদ কমাতে পারে। আরবিআই ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে ৭ ফেব্রুয়ারি। আশা, বর্তমানের ৬.৫০ শতাংশ থেকে রেপো রেট (যে হারে আরবিআই বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) কমিয়ে ৬.২৫ শতাংশ করা হতে পারে। এটা হলে ব্যাঙ্কগুলিও বাড়ি, গাড়ি ও শিল্প ঋণে সুদ কমাবে। তবে সেটা হলে, সুদ কমার আশঙ্কা থাকবে ব্যাঙ্ক আমানতেও। সুদ নির্ভর মানুষদের কাছে যা চিন্তার।
যদিও ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামে পতন এবং পেট্রল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও সেনসেক্স ৩৬,০০০ ছাড়িয়ে এখন মজবুত জায়গায় বসে আছে মূলত সুদ কমার আশাতেই। ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাতে সরকারের কর সংক্রান্ত কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নয়। তবুও জেটলির কথায় ইঙ্গিত আছে, এই ধরনের দু’একটি প্রস্তাব অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে থাকলেও থাকতে পারে। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঘোষিত হবে আরও বেশ কিছু কোম্পানির ত্রৈমাসিক ফলাফল। অর্থাৎ আগামী ক’দিন বেশ চঞ্চল থাকবে শেয়ার বাজার।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি বড় মাপের সংস্থার আর্থিক ফলাফল। এ বারও নজর কাড়া ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশ করেছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়। রিলায়্যান্সই দেশের প্রথম সংস্থা, যাদের ত্রৈমাসিক মুনাফা ছাড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকার আয়ে ভর করে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই তিন মাসে সংস্থাটির নিট মুনাফা ছাড়িয়েছে ১০,২৫০ কোটি টাকা। এরই পাশাপাশি রিলায়্যান্স জিও ইনফোকম প্রকাশ করেছে তাদের ৬৫ শতাংশ লাভ বাড়ার খবর। রিলায়্যান্স রিটেলের করপূর্ব লাভ বেড়েছে ১৭৭ শতাংশ।
ভোগ্যপণ্য সংস্থা হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের নিট মুনাফা ৯ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১,৪৪৪ কোটি টাকায়। বাজারে মোট শেয়ার মূল্যের দিক থেকে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ২০.৩ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ৫,৫৮৬ কোটি টাকা। বছর শেষে ব্যাঙ্কের নিট অনুৎপাক সম্পদ ছিল মোট ঋণের মাত্র ০.৪২ শতাংশ, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ভাল।
পূর্ণ খরা চলছে ইকুইটি শেয়ারের আইপিও (বাজারে প্রথম শেয়ার ছাড়া) বাজারে। তবে আসছে বিভিন্ন সংস্থার অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার অর্থাৎ এনসিডি ইসু। সুদও দেওয়া হচ্ছে বেশ চড়া হারে (৮.৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ)।
সুদ আকর্ষণীয় মনে হলেও, লগ্নির আগে সংশ্লিষ্ট ইসুর ক্রেডিট রেটিং এবং সংস্থার আর্থিক অবস্থা ভাল করে বুঝে নেওয়া উচিত। কোনও কোনও ইসুতে ১০ বছর মেয়াদি এনসিডি কিন্তু জামিনযুক্ত নয় (আনসিকিওরড)। এটাও মাথায় রাখতে হবে লগ্নির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে।