প্রতীকী ছবি।
কম সময়ে বাজার বেশি তেতে উঠলে তা সংশোধনের কবলে পড়ে। এটা স্বাভাবিক। ২৬ জুলাই সেনসেক্স ছিল ৫৫,২৬৮ অঙ্কে। ১৭ অগস্ট ছুঁয়ে ফেলে ৬০,২৬০। অর্থাৎ মাত্র তিন সপ্তাহে উত্থান প্রায় ৫০০০ পয়েন্ট। ফলে বাজারের নিয়মে তার কিছুটা সংশোধন হওয়ারই ছিল। এ ছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতি এখন বেশ টলোমলো। ভারতের পরিস্থিতি তুলনায় মজবুত হলেও, মাঝেমধ্যে দেশ ও বিদেশের নানা রকম খবরের প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ার লেনদেনে। যা চঞ্চল রেখেছে সেনসেক্স এবং নিফ্টির মতো সূচককে।
তার উপরে সাবধানে পা ফেলছেন লগ্নিকারীরা। অনেকেই কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। মুনাফা হাতে নিয়ে খুব বেশি দিন বসে থাকতে নারাজ তাঁরা। গত সপ্তাহে মাত্র চারটি কাজের দিনের দু’টিতে সেনসেক্স উঠেছে ১৬০১ পয়েন্ট। বাকি দু’দিনে পড়েছে ১৬৩২।
চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক গত সপ্তাহের ভাল-মন্দ খবরে। বাজারের অপছন্দের খবরগুলির মধ্যে ছিল—
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) ভারতের জিডিপি ১৩.৫% হারে বাড়লেও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসের (১৬.২%) থেকে ছিল অনেকটা কম। আশঙ্কা, মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে আগামী মাসগুলিতে তা আরও কমতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গোটা অর্থবর্ষের সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার কমাতে শুরু করেছে মূল্যায়ন এবং আর্থিক সংস্থাগুলি।
জুলাইয়ে আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার নেমেছে ৪.৫ শতাংশে, যা ছ’মাসে ন্যূনতম।
আমদানি ৩৭% বেড়ে ৬১৬৮ কোটি ডলারে পৌঁছনোয় বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ২৮৬৮ কোটি ডলার। অগস্টে রফতানি ছিল প্রায় একই জায়গায় (৩৩০০ কোটি ডলার)।
ফের পড়ছে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম। গত সপ্তাহে ৮০.১৪ টাকা ছুঁয়ে ডলার রেকর্ড করেছিল। শেষে তা বন্ধ হয় ৭৯.৮০ টাকায়।
এক দিকে আমদানি বৃদ্ধি এবং অন্য দিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডলার বিক্রির কারণে ২৬ অগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার সঙ্কুচিত হয়ে নেমেছে ৫৬,১০৫ কোটি ডলারে।
অগস্টে দেশে বেকারত্বের হার পৌঁছে গিয়েছে ৮.৩ শতাংশে।
নেতিবাচক খবরের পাশাপাশি বাজার ভাল খবরও পেয়েছে। যেমন—
অগস্টে জিএসটি আদায় হয়েছে ১.৪৩ লক্ষ কোটি টাকা। আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, এই নিয়ে টানা ছ’মাসে সংগ্রহ দাঁড়াল ১.৪০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। আশা, উৎসবের মরসুমে আরও বাড়বে।
দেশে ৩০% গাড়ি বেড়েছে মারুতির বিক্রি। বেড়েছে টাটা মোটরস, হুন্ডাই এবং মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রারও। সেই সঙ্গে ভাল বিকিয়েছে ফ্ল্যাট-বাড়ি। এই দুই ক্ষেত্রের ভাল হলে প্রভাব পড়ে কয়েকটি অনুসারী শিল্পেও।
বেশ কিছু দিন হল বিশ্ব বাজারে ব্যারেল পিছু অশোধিত তেলের দাম ঘোরাফেরা করছে ১০০ ডলারের নীচে। গত সপ্তাহের শেষে ছিল ৯৪ ডলার। এটা এ দেশের পক্ষে সদর্থক। কারণ, এতে আমদানির খরচ কমবে।
ক’দিন আগে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধির হার শীর্ষে পৌঁছেছে। এখন তার নামার পালা। এটাও বলেছিলেন, দু’বছরে তা নামতে পারে ৪ শতাংশে। গত শুক্রবার আর এক কদম এগিয়ে বলেছেন, এপ্রিল-জুনেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৫% হতে পারে। এই আশা বাস্তবায়িত হলে জিডিপি বৃদ্ধির নিরিখে ভারত বিশ্বে প্রথম সারিতে থাকবে। সুদের হার কমবে। চাঙ্গা থাকাবে শেয়ার এবং ফান্ডের বাজার। বাড়বে বিদেশি লগ্নি।
ব্রিটেনকে পিছনে ফেলে ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। তার আগে আছে শুধু আমেরিকা, চিন, জাপান এবং জার্মানি।
(মতামত ব্যক্তিগত)