মূল্যবৃদ্ধির হার কমলে পরের অর্থবর্ষে সুদ কমার সম্ভাবনা। প্রতীকী ছবি।
সুদের ব্যাপারে হঠাৎই সুর পাল্টেছেন আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। জুলাইয়ে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর পরে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ভবিষ্যতে সুদ বৃদ্ধির গতি মন্থর হতে পারে। তা শুনে তেতে উঠেছিল গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজার। ওই মাসেই আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির হার ৯.১% থেকে কমে ৮.৫% হওয়ায় লগ্নিকারীদের আশার পারদ চড়েছিল আরও। কারণ, সুদ যত বাড়বে তত চাহিদা কমার আশঙ্কা। যা আর্থিক বৃদ্ধির পথে মস্ত বড় বাধা। কিন্তু গত শুক্রবার পাওয়েল হঠাৎই উল্টো কথা বলায় চুপসে যায় সে দেশের শেয়ার বাজার। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বড় আকারে সুদ বাড়াতে হতে পারে। ফলে উদ্বেগ দানা বাঁধে সর্বত্র।
পাওয়ালের মন্তব্যে চিন্তা বেড়েছে গৃহস্থ এবং শিল্পের। কারণ, চড়া সুদের কারণে অর্থনীতির গতি আরও শ্লথ হতে পারে, যা বাড়াতে পারে বেকারত্ব। এতেই শুক্রবার ধস নামে আমেরিকার শেয়ার বাজারে। ডাও জোন্স, এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং ন্যাসড্যাক সূচক নামে যথাক্রমে ৩.০৩%, ৩.৩৭% এবং ৩.৯৮%। ভারতের শেয়ার বাজার আগেই বন্ধ হয়েছিল। আজ খোলার পরে তার প্রতিক্রিয়া বোঝা যাবে।
যদিও ভারতের পরিস্থিতি তুলনায় সদর্থক। ৭.০১% থেকে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে ৬.৭১ শতাংশে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মনে করেন, মূল্যবৃদ্ধি শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে। এখন তার পতনের পালা। আগামী দু’বছরে নামতে পারে ৪ শতাংশের কাছে। তাঁর মতে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না জিডিপি বৃদ্ধিতে। অর্থাৎ বার্তা সদর্থক এবং অনেকটাই যেন পাওয়েলের বিপরীতমুখী। ভারতে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলে বড় মাপের সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা কমবে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, চলতি অর্থবর্ষের শেষের দিকে রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) বর্তমানের ৫.৪০% থেকে বেড়ে বড়জোর ৬% হতে পারে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল এখন ১০০ ডলারের কাছে। দাম আর না বাড়লে ভারতের মঙ্গল। অনেক দেশে যখন মন্দার আশঙ্কা, তখন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি ৭.৪% আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা বলেছেন। মূল্যবৃদ্ধির নিরিখেও পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতের অবস্থা অনেক ভাল। এই কথা মাথায় রেখেই এ বার লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দু’তিন বছরের জন্য মনে রাখতে হবে—
* মূল্যবৃদ্ধির হার কমলে পরের অর্থবর্ষে সুদ কমার সম্ভাবনা। যেটা শিল্প ও শেয়ার বাজারের পক্ষে ভাল।
* মূল্যবৃদ্ধির মাথা নামানোর আশায় বন্ড ইল্ড নেমেছে ৭.২১ শতাংশে। সুদ কমার সম্ভাবনা দেখা দিলে বন্ডের দাম বেড়ে ইল্ড আরও নামবে। অর্থাৎ বড় মেয়াদে বন্ডে লগ্নি করা যেতে পারে।
* চিন এবং উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারত ভাল অবস্থায় থাকলে বিদেশি লগ্নির গতি বাড়বে শেয়ার বাজারে। বড় মেয়াদে ভাল শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করা যেতে পারে।
* বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ছোট মেয়াদের আমানতে যতটা সুদ বাড়িয়েছে, বড় মেয়াদে তা করেনি। আপাতত এক-দেড় বছরের মেয়াদে ৫% থেকে ৬% সুদে ব্যাঙ্কে টাকা রাখা যায়।
* অগস্টে মূল্যবৃদ্ধির হার না বাড়লে অক্টোবরে এনএসসি, এমআইএস, পিপিএফ ইত্যাদি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকবে না।
* ভবিষ্যতে সুদ ফের মাথা নামাতে পারে, তা মাথায় রেখে প্রবীণেরা ৭ শতাংশের বেশি সুদের প্রকল্পে বড় মেয়াদে সঞ্চয়ের কথা ভাবতে পারেন।
(মতামত ব্যক্তিগত)