—প্রতীকী চিত্র।
বাজারে জিনিসপত্রের দামের মধ্যে একটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আর্থিক বৃদ্ধির হার যে ভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে সাধারণ ধারণাই হল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগামী কয়েকটি ত্রৈমাসিক সুদের হার নাড়াচাড়া করার থেকে বিরত থাকে।
এর নেপথ্যে প্রধান যুক্তি বোধহয় সুদের হার বাড়িয়ে বিনিয়োগের খরচ বাড়ানোর রাস্তায় না হাঁটা। সুদের হার বাজারের দামের স্তরের উপর রাশ টানার একটা অস্ত্র। কিন্তু এ হল শাঁখের করাত। সুদ বাড়ালে বিনিয়োগের খরচ বাড়ে। একই সঙ্গে বাজারে নগদের চাহিদা কমে। ধার করে খরচ করার উপরও রাশ টানা যায়। এক কথায় বাজারে খরচের প্রবণতা কমে। আর এই প্রবণতা কমলেই বাজারে চাহিদা কমে এবং দাম বাড়ার হারও কমে।
অন্য দিকে, সুদের হার খুব বেশি বাড়ালে তার একটা প্রভাব অবশ্যই পড়বে বিনিয়োগের উপর। কারণ, সুদ বাড়লে মূলধন জোগাড় করার খরচও বাড়ে। আর তার প্রভাব পড়ে সরাসরি আর্থিক বৃদ্ধির হারের উপর।
তাই সুদের হার কমিয়ে-বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কাজটা খুব সহজ নয়। ভারতের বাজারের প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে যে তথ্যগুলির প্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে যে, আগামী কয়েকটি ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার বর্তমান স্তরেই রাখবে, তার অন্যতমটি হল জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার নিয়ে আশা। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ২০২৩ সালের ৬.১ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি আর্থিক বছরে ৬.৩ শতাংশ ছোঁবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে বলে মনে করছে আইএমএফ।
ভারতের বৃদ্ধির হারকে সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী খরচ বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকেই গোটা বছরের মূলধনী খরচের বরাদ্দের ২৮ শতাংশ খরচ করে ফেলেছে। যার একটা বড় প্রভাব বৃদ্ধির হারের উপর পড়ছে বইকি।
বিশ্ববাজারেও মূল্যবৃদ্ধির হারে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছিল, তা-ও অনেকটাই শান্ত হয়েছে। মনে করে হচ্ছে, চলতি বছরে শেষে এই হার নেমে ৫.২ শতাংশে দাঁড়াবে। মাথায় রাখতে হবে ২০২২ সালে এই হার ছিল ৮.২ শতাংশ। যা রুখতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াইয়ে নামে যাতে ভারতও সঙ্গী ছিল।
তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, তেলের দাম ব্যারেল পিছু ৮৫ ডলারের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। যদি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করে, তাহলে কিন্তু এই গোটা অঙ্কটা বানচাল হয়ে যেতে পারে। তবে সবাই মনে করছেন যে, বিশ্বজুড়ে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্তরকে শান্ত করার যে লড়াই শুরু হয়েছিল, তাতে একটা জয়ের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এবং সুদের হার যে স্তরে পৌঁছেছে, সেখান থেকে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই কম। এরপরে আরও বৃদ্ধি হলে তা বাজারের উপর উল্টো চাপ সৃষ্টি করতে পারে।