২০১০ সালে শিলান্যাসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।
জমি কেনা হয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এখনও প্রকল্প তৈরির কাজ শুরুই করে উঠতে পারেনি নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি মতো জল, বিদ্যুৎ ও নিকাশির মতো প্রাথমিক পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত গড়ে দেয়নি রাজ্য। আর এই প্রশাসনিক গড়িমসির কারণেই ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় কলকাতাকে রাখতে আর ভরসা পাচ্ছে না নোনাডাঙায় লগ্নিকারী তিন সংস্থা।
নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে ২০১০ সালে জমি পেয়েছিল এইচএসবিসি, রোল্টা ও এইচসিএল। রাজ্য সরকারের নির্ধারিত দামেই জমি লিজ নেয় তিন সংস্থা। একর প্রতি এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা দরে জমি পায় তারা। সেই সময় ২০০৮-’০৯ সালের মন্দা কাটিয়ে স্থগিত হয়ে যাওয়া সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ফের বাস্তবায়িত করতে চাইছিল এইচএসবিসি, রোল্টা এবং এইচসিএল।
রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, জমি পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্প চালু করে দেওয়ার কথা। কিন্তু গোড়ায় প্রতিশ্রুতি দিলেও নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুত্ সংযোগের মতো পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত তৈরি করে দেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে প্রকল্পের কাজও এগনো যায়নি বলে অভিযোগ সংস্থাগুলির।
নোনাডাঙায় সাড়ে তিন একর জমির উপর ক্যাম্পাস তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল এইচএসবিসি-র। জমি নেওয়ার সময়ে তারা জানিয়েছিল, চালু হওয়ার পরে সেখানে কর্মী সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজার। ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নোনাডাঙায় সাড়ে পাঁচ একর জমিতে ক্যাম্পাস গড়ার পরিকল্পনা করেছিল রোল্টা ইন্ডিয়াও। পাঁচ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা সেখানেও। দেড় একর জমির উপর নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে চেয়েছিল এইচসিএল।
কিন্তু সেই পরিকল্পনা স্তর থেকে তিনটি সংস্থার কেউই এগোতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, একাধিক বার আর্জি জানিয়েও পুর দফতরের তরফ থেকে কোনও সাড়া না-পেয়ে আপাতত হাল ছেড়ে দিয়েছে তারা। ফলে সব মিলিয়ে, বিনিয়োগ আটকে থাকলেও এই মুহূর্তে এই প্রকল্প নিয়ে নতুন করে আর কোনও ভাবনা-চিন্তা করছে না সংস্থাগুলি।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতরও। পুর দফতরের অধীন সংস্থা কে এম ডি এ-র কাছ থেকে এই জমি নিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দাবি, জমির হস্তান্তর ফি নিয়ে দুই দফতরের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। আর সেই কারণেই পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার কাজে হাত দেয়নি কেএমডিএ। কিন্তু সেই সমস্যাও মিটে গিয়েছে বছর দুয়েক আগে। তথ্যপ্রযুক্তি দফতরকে ওই টাকা ছাড় দিয়েছে পুর দফতর। ২০১৩ সালেই মন্ত্রিসভায় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এত সব কিছুর পরেও জল, নিকাশি বা বিদ্যুতের মতো অত্যাবশ্যক পরিষেবা মেলেনি। ফলে তার মাসুল গুনে খাস কলকাতায় ১০ একর জমির তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক এখনও সেই তিমিরে।
এক দিকে মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা মতো জেলায়-জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক তৈরির কাজ চলছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই ৮টি পার্ক তৈরি হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি মহলের ক্ষোভ, সেখানে নোনাডাঙা পার্ক প্রশাসনিক গড়িমসির শিকার হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, কলকাতাতেই এই হাল হলে জেলায় লগ্নি করতে ভরসা পাবে কোন সংস্থা?