ছবি: সংগৃহীত
অগস্টে সঙ্কুচিত হয়েছিল ০.৫%। সেপ্টেম্বরে সঙ্কোচনের হার আরও বাড়ল। বৃহস্পতিবার সরকারি পরিসংখ্যান জানাল, গত মাসে দেশের আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উৎপাদন সরাসরি কমেছে ৫.২%। গত এক দশকে সবচেয়ে কম। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, অর্থনীতির আকাশে সঙ্কটের মেঘ কতটা গভীর হয়েছে তারই ইঙ্গিত এটি।
শুধু তা-ই নয়, উদ্বেগ বাড়িয়ে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, উৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে আটটি পরিকাঠামোর সাতটিতেই। কয়লা, অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, শোধনাগারজাত পণ্য, ইস্পাত সিমেন্ট ও বিদ্যুতের। শুধু সার ক্ষেত্র বেড়েছে ৫.৪%। অথচ পাঁচ বছরে ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি করতে পরিকাঠামোকেই তুরুপের তাস করতে চাইছে কেন্দ্র। যে কারণে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
পরিকাঠামোয় সঙ্কোচনের জন্য চাহিদার অভাবকেই দায়ী করেছেন আইআইএম-কলকাতার অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপ সিংহ। তাঁর যুক্তি, চাহিদা না-থাকায় পণ্যের চাহিদা কমেছে। ফলে উৎপাদনও মার খাচ্ছে। তাই এই সঙ্কোচন। সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, অর্থনীতির শ্লথ গতি যে স্বাভাবিক ওঠাপড়ার চক্র নয়, বরং কাঠামোগত সমস্যা, এতে সেটা আরও স্পষ্ট হল। তাঁর দাবি, ‘‘বেসরকারি ক্ষেত্রের লগ্নির খিদে নেই। অর্থের অভাবে ধাক্কা খাচ্ছে সরকারি লগ্নি। ফলে পুঁজির অভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে পরিকাঠামো।’’
অর্থনীতিবিদদের বড় অংশেরও মত, বৃদ্ধির গতি ফেরানোর অন্যতম অস্ত্র পরিকাঠামোয় লগ্নি। কারণ, দেশে রাস্তা, সেতু, বন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি তৈরি হলে, ইস্পাত, সিমেন্ট-সহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ে। অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয় স্থায়ী সম্পদ। তৈরি হয় কাজের সুযোগ। যার হাত ধরে চাহিদা বাড়ে ভোগ্যপণ্যের। এগোয় অর্থনীতির রথ। তাই পরিকাঠামো এতটা ধাক্কা খাওয়ায় চিন্তিত লগ্নিকারীরা। তার উপরে শিল্পোৎপাদন সূচকে এই আটটি প্রধান ক্ষেত্রের ভাগ ৪০.২৭%। ফলে এগুলি খারাপ থাকলে, শিল্পোৎপাদনেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এ দিন মূল্যায়ন সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ বলেছে, ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতির প্রতিফলন পরিকাঠামো ক্ষেত্রের এতটা সঙ্কোচন। তাদের আশঙ্কা, এর জেরে সেপ্টেম্বরের শিল্পোৎপাদনও ২.৫-৩.৫% সঙ্কুচিত হতে পারে। ইতিমধ্যেই অগস্টে যা কমেছে। এর আগে জুলাইয়েও পরিকাঠামোয় বৃদ্ধির গতি কমেছিল, তবে তা সঙ্কুচিত হয়নি। গত বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছিল ৪.৩% হারে।