প্রশ্নের মুখে। বিশাল সিক্কা।
টাটাদের সঙ্গে সাইরাস মিস্ত্রির তেতো লড়াই গড়িয়েছে আদালতে। আর এ বার প্রতিষ্ঠাতাদের তোপের মুখে ইনফোসিসের পরিচালন পর্ষদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, গত মাসেই নিজেদের হাতে গড়া তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির পর্ষদকে চিঠি পাঠিয়েছেন এন আর নারায়ণমূর্তি, ক্রিস গোপালকৃষ্ণন, নন্দন নিলেকানিররা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। সিইও বিশাল সিক্কার বিপুল বেতন বৃদ্ধি, সংস্থা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে দুই কর্তাকে দেওয়া আকাশছোঁয়া অঙ্ক এবং সংস্থা পরিচালনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। একে প্রতিষ্ঠাতা, তার উপর পরিবারের সদস্যদের হাতে থাকা শেয়ার ধরলে ইনফোসিসের ১২.৭৫% অংশীদারি এঁদের পকেটে। ফলে এ চিঠি গুরুত্ব পাচ্ছেই। একই সঙ্গে সংস্থা পরিচালনা নিয়ে তোপ দেগেছেন টি ভি মোহনদাস পাই-ও। ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও এবং বোর্ড সদস্য পাইয়ের প্রশ্ন, শীর্ষ কর্তাদের বেতন যে এ ভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্ন কোথায়? তাঁর মতে, এ নিয়ে কড়া প্রশ্ন তুলে ঠিক কাজই করেছেন প্রতিষ্ঠাতারা।
অনেকে অবশ্য বলছেন, সংঘাত শুধু সিইও-র বেতন নিয়ে নয়। প্রতিষ্ঠাতাদের মনে হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ইনফোসিসের ডিএনএ-ই। পাল্টাচ্ছে সংস্কৃতি। যা তাঁরা চান না। গত বছরেই সিক্কার বেতন বেড়ে হয়েছে ১.১ কোটি ডলার (প্রায় ৭৫ কোটি টাকা)। অধিকাংশ সাধারণ কর্মীর সঙ্গে তার ফারাক বেড়েছে বহুগুণ। যা সংস্থায় আগে এতখানি কখনও ছিল না। ২০১৬ সালে সংস্থার সিএফও পদ ছেড়েছিলেন রাজীব বনসল। ২৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল তাঁকে! ইনফোসিস ছাড়ার সময়ে ৫.৮৫ কোটি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পান আইনি উপদেষ্টা ডেভিড কেনেডিও। তখন থেকেই প্রশ্ন ওঠে সংস্থা ছাড়ার জন্য এত টাকা তাঁরা পাচ্ছেন কেন? ইনফোসিসে ১৭ বছর কাটানো পাইয়ের কটাক্ষ, ভারতে কখনও সংস্থা ছাড়ার জন্য দু’বছরের বেতন কোনও সিএফও পাননি।
তা ছাড়া, বিভিন্ন সূত্রে শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিন্হার স্ত্রীকে পর্ষদে আনা নিয়ে আপত্তি ছিল প্রতিষ্ঠাতাদের। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির ছোঁয়াচ তাঁরা চাননি। সম্প্রতি যে ভাবে সংস্থা অধিগ্রহণের পথে ইনফোসিস পা বাড়িয়েছে, তা নিয়েও কিছু ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল তাঁদের। ফলে সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠাতারা মনে করছিলেন, সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে ইনফোসিসের। সাইরাস মিস্ত্রিকে টাটা গোষ্ঠীর শীর্ষ পদ থেকে সরানোর যুক্তি হিসেবে এই কথা বলেছিল টাটারাও। তাই দুই ঘটনায় বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও তুলনা কোথাও এসেই যাচ্ছে।
আবার টাটার ঘটনার সূত্রেই বিভিন্ন মহল থেকে এ দিন সমালোচনারও মুখে পড়েছেন পাই। মিস্ত্রিকে সরিয়ে অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে রতন টাটা ফেরার সময়ে পাই বলেছিলেন, চলে যাওয়ার পরে এ ভাবে ফেরা ঠিক নয়। মিস্ত্রি যে ভাবে টাটা গোষ্ঠীকে ঢেলে সাজতে চাইছিলেন, তারও সমর্থন করেছিলেন তিনি। অথচ এখন সেই তিনিই পাশে দাঁড়াচ্ছেন বোর্ডকে কড়া প্রশ্ন করা ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতাদের। যদিও সংস্থার পর্ষদে নিজের ফেরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
এমনিতে সিক্কার প্রশংসা করেছেন পাই। বরং নাম না-করে বিঁধেছেন চেয়ারম্যান আর শেষাসয়ীকে। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন শক্ত চেয়ারম্যান একান্ত জরুরি।’’ পর্ষদ অবশ্য শেষাসয়ী ও সিক্কারই পাশে।