বিশাল সিক্কা ও সাইরাস মিস্ত্রি।
ভারতে কর্পোরেট দুনিয়ার নামী-দামি সংস্থায় প্রতিষ্ঠাতা বা পরিবারের তরফে কেউ দীর্ঘদিন হাল ধরে থাকার পরে অবসর নিলেই দানা বাঁধছে পরিচালনার সমস্যা। শুরু হয়ে যাচ্ছে নতুন কর্ণধারের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই। এমনটাই ধরা পড়েছে দেশের মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞদের চোখে। সেই কারণেই উত্তরসূরি বাছাইয়ে আরও সতর্ক হয়ে পরিকল্পনা তৈরির উপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। ভারতে এ ধরনের পরিকল্পনার এখনও অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রতিষ্ঠাতা বা পরিবারের তরফে সংস্থার মাথায় বহু দিন থাকার পরে অবসর নিলে কোনও তথাকথিত ‘বহিরাগত’ দায়িত্ব পেলেই যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে তার প্রথম উদাহরণ টাটা সন্স থেকে সাইরাস মিস্ত্রির সরে যেতে বাধ্য হওয়া। মানবসম্পদ নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবা সংস্থা টিমলিজ সার্ভিসেস-এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা ও এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী এ কথা জানিয়ে বলেন, দ্বিতীয় উদাহরণ ইনফোসিসের সিইও-র পদ থেকে আচমকাই বিশাল সিক্কার ইস্তফা। তাঁর মতে এই দু’টি ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, উত্তরসূরি বাছার পরিকল্পনা এ দেশে এখনও কতটা নড়বড়ে।
অথচ, একটি ব্লু-চিপ সংস্থাকে প্রতিষ্ঠাতা সরে যাওয়ার পরেও প্রতিষ্ঠান হিসেবে উজ্জ্বল উপস্থিতি বজায় রাখতে এই পরিকল্পনা জরুরি বলে মনে করছে টিমলিজ। ফলে তিনি পদে বহাল থাকতে থাকতেই পরবর্তী নেতৃত্ব কার হাতে যাবে তা ঠিক করে রাখা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ব্যাঙ্ক, বিমা ও আর্থিক পরিষেবার মতো কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বিষয়টি এখনও কর্পোরেট দুনিয়ায় তেমন গুরুত্ব পায় না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে বিদেশে এ ধরনের উত্তরসূরি খোঁজা শুরু হয়ে যায় প্রতিষ্ঠাতা বা পরিবারের কর্তা অবসর নেওয়ার বহু মাস আগে থেকেই, জানিয়েছেন এগ্জিকিউটিভ নিয়োগের আন্তর্জাতিক সংস্থা আন্টাল ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জোসেফ দেভাসিয়া।
এগ্জিকিউটিভ খোঁজার দায়িত্বে থাকা আর এক সংস্থা গ্লোবাল হান্ট-এর এমডি সুনীল গোয়েল বলেন, অনেক সময়েই দেখা যায় চিফ অপারেটিং অফিসারকে চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার পদে উন্নীত করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল, নতুন দায়িত্ব নিতে সব মহলে গ্রহণযোগ্যতা থাকা চাই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন জ্যোতি খেতান বলেন, উত্তরসূরির কাজকর্ম পছন্দ না-হলে প্রকাশ্যেই প্রতিষ্ঠাতা বা প্রো়মোটারদের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর ঠান্ডা লড়াই। নামী ব্যক্তিত্বদের এ ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি এড়িয়ে চলাই ভাল। কারণ, তাতে সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।