Labor Law

শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে পিছু হটার ইঙ্গিত

লগ্নিকারীরা আদৌ এ দেশে টাকা ঢালতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন কি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি

কেন্দ্রের প্রচ্ছন্ন মদতেই শ্রম আইন রদ এবং শিথিল করার পথে হেঁটেছে বিভিন্ন রাজ্য। এখন কর্মী সংগঠনগুলির চাপ এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হস্তক্ষেপের পরে বাধ্য হয়েই ওই উদ্যোগ থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ একাধিক কর্মী সংগঠনের। চাপের মুখে পড়ে সরকার সঠিক রাস্তায় ফিরছে বলে দাবি সঙ্ঘের ট্রেড ইউনিয়ন বিএমএসেরও। আর শিল্পমহলের একাংশের প্রশ্ন, ঘন ঘন এ ভাবে নীতি বদলের কথা বললে, লগ্নিকারীরা আদৌ এ দেশে টাকা ঢালতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন কি? এর পরিবর্তে কি উচিত ছিল না সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আগে কথা বলে তবে শ্রম আইন বদল বা শিথিলের পথে হাঁটা?

Advertisement

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের বক্তব্য, লগ্নি টানার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্য যে ভাবে কর্মী-স্বার্থ মাথায় না-রেখেই বিভিন্ন শ্রম আইন রদ করেছে, খর্ব করেছে তাঁদের অধিকার, তাতে ছাড়পত্র দেবে না কেন্দ্র। কারণ, মোদী সরকার বিনিয়োগ টানতে চায় ঠিকই। কিন্তু তারা তা করতে আগ্রহী শ্রমিক-স্বার্থে আঘাত না-করে।

কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের অভিযোগ, “গোড়ায় কেন্দ্রীয় শ্রম সচিব হীরালাল সামারিয়াই চিঠি লিখেছিলেন প্রত্যেক রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিবকে। আর্জি জানিয়েছিলেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শ্রম সংস্কারে মন দিতে। যাতে দেশের সমস্ত প্রান্তে লগ্নি কিংবা ব্যবসা করার পথ আরও মসৃণ হয়। তার পরেই দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার কথা বলেছে বিভিন্ন রাজ্য। একাধিক শ্রম আইন আপাতত শিকেয় তোলার পথে হেঁটেছে উত্তরপ্রদেশ।” এখন সারা দেশে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে এবং আইএলও-র হস্তক্ষেপের দরুন রাজ্যগুলির নীতি থেকে কেন্দ্র দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে, তাঁর দাবি।

Advertisement

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক শ্রম বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে ভাবে ভারতে শ্রম আইন বদল এবং শিথিলের পথে হাঁটছে বিভিন্ন রাজ্য, তা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা আইএলও। এ দেশের দশ ট্রেড ইউনিয়নকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছে, ওই বিধি যাতে ক্ষুণ্ণ না-হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ও সমস্ত রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর আর্জি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জানিয়েছে তারা। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউর জানিয়েছেন, ২২ মে আইএলও-র কাছ থেকে ওই উত্তর পাওয়ার পরে ফের তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোন-কোন রাজ্য কোন-কোন ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে আইন বদলের কথা বলেছে, তা বিস্তারিত লেখা হয়েছে সেখানে। তাঁদের আশা, এ বিষয়ে আগামী দিনেও চাপ বজায় রাখবে আইএলও।

ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের কথায়, “প্রথমে চুপচাপ থেকে রাজ্যগুলির শ্রম আইন বদলে মদত দিয়েছে কেন্দ্র। এখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক দরবারে প্রবল চাপের মুখে চেষ্টা হচ্ছে ভোল বদলের। এর রাজনৈতিক মাসুলও গুনতে হতে পারে ভেবেই সম্ভবত পিছিয়েছে তারা।” বিরোধিতার মুখে পড়েই যে কেন্দ্রের এই মুখ খোলা, তা মানছেন বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ এ কথা বলেছেন। এই খবর বেরিয়েছে শ্রম মন্ত্রকের পদস্থ কর্তার নামে। এ বার খোদ মন্ত্রীর এই মন্তব্য। দেশের পরিস্থিতি দেখে ও প্রতিবাদের আঁচ পেয়ে কেন্দ্র যে ওই সব বদলে ছাড় না-দেওয়ার কথা বলেছে, তা স্বাগত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement