অনেক দিনই ৬৫ থেকে ৬৮ টাকার মধ্যে দুলছে ডলারের দর। তার উপর গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় প্রতি দিন মার্কিন মুদ্রার সাপেক্ষে টাকার দাম পড়ছে নিয়ম করে। বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের উদ্বেগ বাড়িয়ে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য নেমে গেল রেকর্ড তলানিতে। ডলারের দর দাঁড়াল ৬৮.৭৯ টাকা। দিনের মাঝে এক সময় তা পৌঁছেছিল ৬৯.১০ টাকাতেও। অনেকে বলছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপেই সেখান থেকে কিছুটা পতন সামলেছে টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টাকার এই ‘অধঃপতনে’র মূল কারণ, বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের দামামা। সঙ্গে দোসর ইরানের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, হালে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মার্কিন অর্থনীতি। বেকারত্ব কমছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে। উন্নতির আভাস পেয়ে বাজারে লগ্নির বড় অংশ চলে যাচ্ছে সেখানে। লগ্নির জায়গা হিসেবে কদর বাড়ছে ডলারেরও। আর তা যত শক্তিশালী হচ্ছে, ততই মুখ থুবড়ে পড়ছে টাকা। এতে ইন্ধন জুগিয়েছে শুল্ক যুদ্ধ এবং অবশ্যই ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা।
মূলত এই কারণে কপাল পুড়েছে প্রায় সমস্ত এশীয় মুদ্রারই। তবে তাদের মধ্যে সব চেয়ে খারাপ দশা টাকার। এ বছর ডলারের সাপেক্ষে তার দর পড়েছে ৭.৭%। দ্বিতীয় ফিলিপিন্সের পেসো। রফতানিকারীরা টাকার দাম কমায় বাণিজ্যে কিছুটা কল্কে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। কিন্তু শুল্ক যুদ্ধে তা-ও কতটা সম্ভব, সে বিষয়ে সংশয়ী অনেকে।
অর্থ মন্ত্রকের দাবি, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে ডলার আছে যথেষ্ট (১৫ জুন ভাঁড়ারের আয়তন ছিল ৪১ হাজার কোটি ডলার)। ফলে এই সঙ্কট সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। কিছু দিন আগেও অর্থ বিষয়ক সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গের দাবি ছিল, ২.৬% বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের ঘাটতি চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু এখন একই সঙ্গে অশোধিত তেল ও ডলারের চড়া দামে সিঁদুরে মেঘ দেখছে কেন্দ্র। কারণ, দু’টিই বাড়লে হয় জ্বালানির দর বাড়বে, নয়তো বাড়তি ভর্তুকির দায় নিয়ে ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা।
অনেকের মতে, ভারতীয় অর্থনীতি মজবুত থাকলে, এতটা দুর্দশা হত না টাকার। কারণ সে ক্ষেত্রে এখানকার বাজারেও টাকা ঢালতে স্বচ্ছন্দ বোধ করত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। আসত ডলার। এই অবস্থায় আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। তাদের যুক্তি, ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহের বয়সের সঙ্গে ডলারের দামের তুলনা করে কটাক্ষ করতেন নরেন্দ্র মোদী। আর এখন তো প্রধানমন্ত্রীর বয়সকে (৬৪) তা ছাপিয়ে গিয়েছে। মোদী যে ডলারের দর ৪৫ টাকা করার কথা বলতেন, তা-ও মনে করিয়েছে তারা।
বিরোধী নেতা হিসেবে তেলের দাম নিয়ে মোদীর করা আক্রমণের পাল্টা ফিরে এসেছে ইতিমধ্যেই। এ বার ডলারের দরেও ‘বুমেরাং’ সামাল দেওয়ার পালা।