প্রতীকী ছবি।
গত সপ্তাহের শুরুতে বাজার ছিল তেজী। শেষের দিকে ছবিটা বদলে গেল আমেরিকায় সুদের হার বৃদ্ধি নিয়ে মাথা তোলা জল্পনায়। এ দেশে কতটা সুদ বাড়াবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, সে কথা ভেবে উদ্বেগের দিন গুনছে শিল্পমহল এবং মাসে মাসে ধারের কিস্তি গুনতে বাধ্য হওয়া সাধারণ মানুষও।
গত সোমবার অবশ্য দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ফের ৭ শতাংশে উঠে যাওয়া এবং শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির সটান ২.৪ শতাংশে নামা শেয়ার বাজারকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেনসেক্স আবার পা রাখে ৬০ হাজারের ঘরে। মঙ্গলবার পৌঁছয় ৬০,৫৭১ অঙ্কে। সর্বকালীন উচ্চতা থেকে মাত্র ১১৯৫ পয়েন্ট নীচে। নিফ্টি-ও ১৮ হাজার ছাড়ায়। অর্থাৎ জোড়া দুঃসংবাদেও ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে লগ্নিকারীদের আস্থা টলেনি। কিন্তু আমেরিকায় ৭৫-১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বৃদ্ধির জল্পনা ছড়াতেই বুধবার থেকে নামতে থাকে সূচক।কারণ জল্পনা সত্যি হলে এক দিকে ভারত থেকে লগ্নি তুলে আমেরিকার চাঙ্গা বন্ড বাজারে সরে যাবে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। অন্য দিকে, সে দেশ মন্দায় পড়লে প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতিতেও। মার খাবে রফতানি। শুক্রবার সেনসেক্স নামে ১০৯৩ পয়েন্ট। তিন দিনে ১৭৩০.২৯।
দেশেও খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথা তোলায় লগ্নিকারীদের আশঙ্কা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) আরও ৩৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়াতে পারে। ঋণের খরচ আরও বাড়ায় তা আঘাত হানবে শিল্প বৃদ্ধিতে। এই অনুমানে ভর করেই বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাচ্ছে। একাংশের মতে, তা নামতে পারে ৭ শতাংশেরও নীচে। ফলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহটা বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় আমেরিকায় সুদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ফেড রিজ়ার্ভ আর দেশে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিকে রোখা। রফতানির তুলনায় দ্বিগুণ আমদানিও বাণিজ্য ঘাটতিকে ঠেলে তুলে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। ফলে পড়ছে টাকার দাম, চড়ছে ডলার। কমছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। ডলার নির্ভরতা কমাতে মোদী সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ভারতীয় টাকায় বাণিজ্য শুরুর পথে কিছুটা এগিয়েছে।
অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভাল খবর, জুলাই-সেপ্টেম্বরে সংস্থাগুলির ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকার অগ্রিম কর জমা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২.৬% বেশি। এর মানে, তাদের লাভ ভালই বাড়বে। আশা, ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসবের মরসুমে বাড়বে পণ্যের চাহিদা এবং বিক্রিবাটা। তাতে কিছুটা গতি আসতে পারে বৃদ্ধির চাকায়।
(মতামত ব্যক্তিগত)