অরুণ জেটলি
অর্থনীতির অসুখ হয়েছে, মানতে নারাজ মোদী সরকার। কিন্তু অসুখ সারাতে ওষুধ দেওয়ার ভান! দেশের অর্থনীতি নিয়ে এমনই অবস্থান মোদী সরকারের!
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আজ পরিকাঠামো ও সরকারি ব্যাঙ্কের পুঁজিতে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ঢালার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। যার মধ্যে নতুন সিদ্ধান্ত হলো, প্রায় ৮৪ হাজার কিলোমিটার সড়ক তৈরিতে ৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ এবং ব্যাঙ্কের পুঁজিতে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকার নতুন জোগান। এর পরেও কিন্তু অর্থনীতির অবস্থা যে খারাপ, তা মানতে রাজি নয় অর্থ মন্ত্রক।
বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন, নতুন ঘোষণার মধ্যেও আসলে নতুন কিছু নেই। কারণ ‘ভারতমালা’ নামে দেশ জুড়ে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প আগেই হওয়ার কথা ছিল। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাতে সিলমোহর পড়েছে মাত্র। এই প্রকল্পের টাকাও খরচ হবে আগামী পাঁচ বছর ধরে। বাকি প্রকল্পের কাজ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ব্যাঙ্কের নতুন পুঁজির জোগানের বন্দোবস্তও এমনিতেই করতে হতো সরকারকে।
তা সত্ত্বেও অর্থ মন্ত্রকের সচিবদের নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ঘটা করে এই সব ঘোষণা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, গুজরাতের ভোটের আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে কি চাপে রয়েছে বিজেপি? সেই জন্যই কি ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখাতে নতুন-পুরনো প্রকল্পগুলিকে নতুন মোড়কে সাজিয়ে এমন ঢাক পেটাতে হচ্ছে মোদী সরকারকে?
কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, মোদী নিজে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেন। আর পিঠ বাঁচানোর প্রয়োজন হলে অরুণ জেটলিকে এগিয়ে দেন। জেটলির জবাব, ‘‘এত জলদি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক নয়। আমরা তো বলেই ছিলাম, অর্থনীতির প্রয়োজনে যা করার দরকার, আমরা তা করব।’’
জেটলি অবশ্য আজ নিজেই আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গকে দিয়ে পরিসংখ্যান দিইয়ে দাবি করেছেন, মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার, বিদেশি লগ্নি, বিদেশি মুদ্রায় আয়-ব্যয়ের ঘাটতির মাপকাঠিতে অর্থনীতির অবস্থা মোটেই খারাপ নয়। অর্থনীতিবিদেরা যদিও বলছেন, বাস্তব হলো, নোট বাতিল ও জিএসটি-র ধাক্কায় আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মোদী সরকারের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি লগ্নিতে গতি আসেনি। জেটলিও আজ সে কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, লগ্নি বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। আর লগ্নি আনার জন্যই সরকার পরিকাঠামোতে খরচ করছে।
অর্থনীতিকে অক্সিজেন জোগাতে গিয়ে খরচ বাড়ানো এবং তার জন্য রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ ঢিলে করার পক্ষে নন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টারাই। জেটলিরও আশ্বাস, তিনি রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রাখবেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, আপাত ভাবে ঘাটতি বৃদ্ধির কারণও নেই। কারণ, এই সব প্রকল্পের অধিকাংশ আগেই ঘোষিত। বেশির ভাগ টাকাই আসার কথা বাজার থেকে ধার করে। যেটুকু সরকারকে দিতে হবে, তা বাজেটে আগেই বরাদ্দ রয়েছে।