শক্তিকান্ত দাস
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যেই আনলক পর্বে কাজে ফিরছেন মানুষ। তবে অর্থনীতির চাকা গড়ালেও, মাঝারি মেয়াদে তার ঘুরে দাঁড়ানো নিশ্চিত নয় বলে সতর্ক করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। সেই সঙ্গে বললেন, অতিমারি সরাসরি ধাক্কা দেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মূলধনে। মাত্রা ছাড়াতে পারে অনুৎপাদক সম্পদ। তবে করোনা আটকানোর পরে সতর্ক ভাবে শিথিল হওয়া নিয়ন্ত্রণ ধাপে ধাপে ফেরানো হবে বলেও জানান তিনি। গভর্নরের বার্তা, এখনকার শিথিল নিয়ন্ত্রণকেই ‘নতুন নিয়ম’ বলে ধরে না-নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে হবে দেশের আর্থিক ক্ষেত্রকে।
শুক্রবার স্টেট ব্যাঙ্ক আয়োজিত সপ্তম ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড ইকনমিক্স কনক্লেভে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার বলেছিলেন, জুন থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শনিবার একই অনুষ্ঠানে ভিডিয়োবার্তায় শক্তিকান্ত বলেন, ২০০৮-এর বিশ্ব মন্দা ও করোনা দেখিয়ে দিয়েছে অর্থনীতির ক্ষত কতটা গভীর হতে পারে। বর্তমানে কিছু লক্ষণ ভাল ঠিকই। কিন্তু করোনার জেরে ধাক্কা খেয়েছে শিল্পোৎপাদন। কমেছে মানুষের খরচের ক্ষমতা। ফলে বাজারে জোগানের অভাব যেমন স্পষ্ট, তেমনই চাহিদা কবে ফিরবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তাই আশঙ্কা থাকছেই।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে আরবিআই। এর মধ্যে করোনা আবহে শুধু এ বছর মার্চ থেকেই ১১৫ বেসিস পয়েন্ট। ব্যবস্থা করা হয়েছে বাজারে ৯.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা নগদেরও। শক্তিকান্তের মতে, এই সব পদক্ষেপ ও কেন্দ্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অর্থনীতির চাকায় গতি আনবে। তবে তাতে সময় লাগবে। যদিও এই সুদ কমানো নিয়ে আজ ওই অনুষ্ঠানেই গভর্নরকে বিঁধেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর রথীন রায়। তাঁর মতে, সুদ কমালেই লগ্নিতে জোয়ার ও বৃদ্ধিতে গতি আসবে, বিষয়টা এতটা সরল নয়। কারণ, কম সুদের সুবিধা সকলের কাছে পৌঁছচ্ছে না। করোনার জেরে ঘাটতি যে জায়গায় পৌঁছবে, তা সামাল দিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে মাঠে নামতে হবে বলেও মত অনেক অর্থনীতিবিদের।
শক্তিকান্ত যদিও বলেন, স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য মজবুত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ও বৃদ্ধির মধ্যে সমন্বয় আনাই বড় চ্যালেঞ্জ। সে জন্য তিনি জোর দিয়েছেন উদ্ভাবনী কৌশলের উপরে। বলেছেন ঝুঁকি কমানোর কথাও। দেশের আর্থিক ক্ষেত্রকে তাঁর বার্তা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিস্থিতি বিচার করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু কবে কী হবে তার ভরসায় না-থেকে ব্যাঙ্কগুলিকেও পরিস্থিতি আঁচ করে আগে থেকে মূলধন জোগাড় করতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্বল আর্থিক সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ‘রেজ়লিউশন কর্পোরেশন’ গঠনের পক্ষেও সওয়াল করেছেন গভর্নর।
গভর্নরের সতর্কবার্তা
• বাজারে জোগানের অভাব স্পষ্ট। চাহিদা কবে স্বাভাবিক হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
• ঘুরে দাঁড়ানোর সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেও, মাঝারি মেয়াদে অর্থনীতি অস্থির থাকারই সম্ভাবনা।
• করোনার জেরে বাড়বে ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ।
• ধাক্কা লাগতে পারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মূলধনেও
• বিশ্ব মন্দা, করোনা দেখিয়ে দিয়েছে অর্থনীতির ক্ষত কত গভীর হতে পারে, তা যুঝতে আর্থিক ক্ষেত্রের তহবিলও বেশি হতে হবে।