বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার দিল্লির নতুন সংসদ ভবনে। ছবি: পিটিআই।
বাজেট অধিবেশন শুরুর আগের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন এই বাজেট হতে চলেছে নারীত্বের উৎযাপন। সেই আপ্তবাক্যকে সামনে রেখেই বাজেট বক্তৃতায় গত দশ বছরের নারী ক্ষমতায়নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সঙ্গে নতুন ঘোষণা করলেন মহিলাদের প্রকল্পেও । যার মধ্যে অন্যতম ‘লাখপতি দিদি’।
বৃহস্পতিবারের বাজেট বক্তৃতায় নির্মলা ঘোষণা করেছেন, ‘‘গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রকল্প ‘লাখপতি দিদি’কে আরও প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র।’’ নির্মলা জানিয়েছেন, এত দিন ‘লাখপতি দিদি’ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ কোটি মহিলার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। সেই মাত্রা আগামী দিনে বাড়িয়ে ৩ কোটি করা হচ্ছে।
কারা এই লাখপতি দিদি? গত বছর অগস্টেই বিশ্বকর্মা প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি লাখপতি দিদি প্রকল্প ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এই প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের নানা রকম কারিগরি দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যার সাহায্যে প্রতি বছর অন্তত ১ লক্ষ টাকা করে উপার্জন করতে সমর্থ হবেন এই মহিলারা। মূলত গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বাধীন করাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
কেন্দ্র জানিয়েছিল, তারা আগামী দিনে গ্রামীণ ভারতে এমন ২ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যাই আরও বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা।
তবে মহিলাদের ক্ষমতায়নে জোর দেওয়ার পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের কথাও বলেছেন নির্মলা। পর্যটনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশের মধ্যবিত্তরা বেড়াতে ভালবাসেন, নতুন নতুন জায়গায় যেতে ভালবাসেন। তাই মধ্যবিত্তদের টানতেই দেশের সমস্ত রাজ্যকে নতুন পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি করতে উৎসাহ দিয়েছেন নির্মলা।
তবে যেমনটি নির্মলা বক্তৃতার শুরুতেই বলেছিলেন, এ বারের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চারটি বিষয়ে— নারী, যুব, গরিব এবং অন্নদাতা। যদিও বাজেট বক্তৃতায় এঁদের জন্য যত না ঘোষণা করা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি বলা হয়েছে এঁদের জন্য গত দশ বছরে সরকার কী করেছে তা নিয়েই।
আয়কর কাঠামোয় কোনও বদল আসছে না। কারণ, এটা অন্তর্বর্তী বাজেট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মার্চ মাস পর্যন্ত ছিল। সেগুলির সময়সীমা বাড়ানো হবে। এই ছাড়গুলি ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
মধ্যবিত্তরা বেড়াতে ভালবাসেন। তাই দেশের সমস্ত রাজ্যকে বৈগ্রহিক পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হবে।
এখন সাত লাখ টাকা পর্যন্ত কোনও আয়কর দিতে হয় না। খুচরো বিক্রেতাদের আয়করের উর্ধ্বসীমা ২ কোটি থেকে ৩ কোটি হয়েছে। কর্পোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে কমে ২২ শতাংশ হয়েছে।
দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের প্রসার ঘটানো হবে। ১০০০ নতুন বিমানের বরাতও দিয়েছে ভারতীয় বিমান পরিবহণ সংস্থাগুলি।
প্রত্যক্ষ কর অনেক বেড়েছে। আয়কর জমা দেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৪ গুণ।
দেশে অনেক নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। আমরা এর জন্য বিদেশি বন্ধুদের সুবিধা দিচ্ছি। আমরা বিকশিত ভারতের কথা ভাবছি। ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে যাতে মাইলস্টোনগুলি টপকানো যায়। আমাদের এখানে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে তার মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে সাহায্য করা হবে।
ধর্মীয় পর্যটনে জোর দেবে কেন্দ্র। রাজ্যে রাজ্যে পর্যটন স্থানগুলির উন্নয়ন চাই। দরকারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। লক্ষদ্বীপ-সহ দেশের সর্বত্র পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ।
রেলের ৪০ হাজার সাধারণ বগি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো করা হবে। ট্রেনের গতি বাড়বে।
এখন আমাদের ১৪৯টি বিমানবন্দর রয়েছে। একাধিক ভারতীয় সংস্থা এক হাজারেরও বেশি বিমানের অর্ডার দিয়েছে। আগামী দিনে আরও সস্তা হবে বিমান সফর।
গোটা দেশের মেট্রো রেলের উন্নয়ন করা হবে।
তিনটি রেলওয়ে করিডর তৈরি হবে। শক্তি, খনিজ এবং সিমেন্ট করিডর হবে। এ ছাড়া বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের করিডর এবং ট্রাফিক ডেনসিটি করিডর তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ইতিমধ্যেই ৩ কোটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে আরও ২ কোটি বাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
মৎস্যজীবীদের আমরা সাহায্য করেছি। দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। মৎস্যসম্পদ যোজনা অনেক উপকার দিয়েছে। আগামী দিনে উৎপাদন আরও বাড়বে।
যাঁরা দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপাদন করেন, তাঁদের জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি। কী ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সেটা দেখা হবে। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি দুধ পাওয়া যায় কিন্তু উৎপাদনশীলতা কম। সে দিকে নজর দেওয়া হবে।
৮৩ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে দেশে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। এর ফলে এক কোটি মহিলা স্বনির্ভর হয়েছেন। ‘লাখপতি দিদি’র সংখ্যা দু’কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনা ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
সব আশাকর্মীর জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প।
সার্ভাইকাল ক্যানসারের টিকা দেওয়া হবে ৯ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের।
বাড়ির ছাদে সৌরপ্যানেল লাগানোর ব্যবস্থা করবে কেন্দ্র। প্রতি মাসে ১ কোটি পরিবারকে ৩০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
আমরা দেশের পূর্বাঞ্চলকে বৃদ্ধির আওতায় আনতে চাই। পূর্বাঞ্চলের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। আবাস যোজনায় তিন কোটি বাড়ি তৈরি হয়েছে। আর দু’কোটি বাড়ি তৈরি হবে আগামী পাঁচ বছরে। এক কোটি বাড়ির ছাদে সৌরশক্তি প্রকল্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের পবিত্র দিনে এই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।