অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
লোকসভা ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছেন অযোধ্যায় রামমন্দির। আবার লোকসভা ভোটের আগে তাঁর সরকারের শেষ বাজেট যিনি পেশ করলেন, তিনি নির্মলা সীতারামন। কাকতালীয় হলেও দেশের অর্থমন্ত্রীর নামে রাম-সীতার সহাবস্থান চোখে পড়ার মতো। বৃহস্পতিবার সেই সীতারামনই নিজের বাজেট বক্তৃতায় জানালেন, আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির বিকাশের ‘বিপুল সম্ভাবনা’ রয়েছে ধর্মীয় পর্যটনে। অর্থাৎ আগামী দিনে দেশের ধর্মস্থানগুলিকেই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন এই সিদ্ধান্ত? কারণ হিসাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উন্নতি হবে। আঞ্চলিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।’’ সীতারামন জানিয়েছেন, দেশের বৈগ্রহিক পর্যটন ক্ষেত্রগুলিকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে আরও বেশি করে তুলে ধরার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে। এ ব্যাপারে দেশের সমস্ত রাজ্যকেই এগিয়ে যেতে কেন্দ্র সাহায্য করবে বলেও জানিয়েছেন নির্মলা।
ধর্মীয় পর্যটন কী? অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠার পর এর ব্যাপকতা চোখের সামনে দেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় হোটেল তৈরির প্রস্তাবের ফাইলের পাহাড় জমেছে সরকারের টেবিলে। এতটাই যে সরযূর তীরে মন্দিরনগরীতে এখন আর চাইলেও জায়গা দেওয়ার উপায় নেই। অন্য দিকে অযোধ্যায় ঢল নেমেছে দর্শনার্থীদেরও। এর মধ্যেই ধর্মীয় পর্যটন নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নির্মলা।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘ধর্মীয় পর্যটনে জোর দেবে কেন্দ্র। রাজ্যে রাজ্যে পর্যটন স্থানগুলির উন্নয়ন চাই। দরকারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে।’’
ভারতে তীর্থস্থানের অভাব নেই। বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তীর্থক্ষেত্র রয়েছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। বহু ধর্মীয় পর্যটন ক্ষেত্র রয়েছে এই বাংলাতেই। কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর থেকে শুরু করে মায়াপুর, তারকেশ্বর, এমনকি, তারাপীঠ, কঙ্কালীতলার মতো সতীপীঠও রয়েছে। আবার দীঘায় জগন্নাথের মন্দিরও তৈরি করাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এত দিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এই সমস্ত তীর্থক্ষেত্র নিয়ে সে ভাবে কোনও পরিকল্পনার কথা বলতে শোনা যায়নি। যা নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতেও শোনা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। তিনি বলেছিলেন, “এই সমস্ত তীর্থস্থানে কত কাজ করার দরকার ছিল। সে সব এই সরকার করেছে। ওরা ওখানে রামমন্দির করছে। কই এখানে তো কিছু করেনি!”
ঘটনাচক্রে রামমন্দির পরবর্তী মোদী সরকার তাদের অন্তর্বর্তী বাজেটে সমস্ত রাজ্যেরই ধর্মীয় পর্যটন ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই সঙ্গে অবশ্য অর্থমন্ত্রী সীতারামন জানিয়েছেন, লক্ষদ্বীপ-সহ দেশের সর্বত্র পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। কারণ মধ্যবিত্তেরা বেড়াতে ভালবাসে। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে ভালবাসে। তাদের কথা মাথায় রেখেই রাজ্যগুলিকে নতুন নতুন পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি করতে সাহায্য করার কথাও বলেছেন সীতারামন।
বাংলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ অবশ্য বলছে, সীতারামনের এই পরিকল্পনাটিও অনেক আগেই বাংলায় করে দেখিয়েছেন মমতা। পাহাড়ের বিভিন্ন নতুন নতুন জায়গায় নিজে গিয়ে নতুন পর্যটন ক্ষেত্র তৈরি করিয়েছেন। হোমস্টে বানানোর জন্যও উৎসাহ দিয়েছেন। সেই সব জায়গা রমরমিয়ে ব্যবসা করছে।