ছবি সংগৃহীত
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের বিস্ফোরক বিবৃতির পরেই সামনে এসেছিল দু’পক্ষের মন কষাকষি। রবিবার ফিরে এল ওই সংঘাতের প্রসঙ্গ। এই মুহূর্তে আরবিআইয়ের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর সেই বিরলের কথাতেই। যেখানে তিনি স্পষ্ট জানালেন, কেন্দ্র-রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে বিরোধ মাথা তোলার অন্যতম কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যবস্থার চিরাচরিত ঘেরাটোপ থেকে বার হয়ে ভারতের বাজার নির্ভর অর্থনীতি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ঝোঁক। শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নের শিকড়ও সেখানেই লুকিয়ে। শুধু তাই নয়, দু’পক্ষের টানাপড়েনের আর একটি কারণ হিসেবে বিরল তালিকায় রেখেছেন গৃহস্থের সঞ্চয় কমাকে।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, তাদের ভাঁড়ারের বাড়তি ভাগ দাবি, সুদ কমানো নিয়ে চাপ দেওয়া বা প্রতারণা রুখতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে নজরদারি— প্রায় বছর আড়াই ধরে বিভিন্ন সময়ে এই সব বিষয়কে ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে মোদী সরকারের সঙ্গে আরবিআইয়ের মতবিরোধ। সংঘাতে জড়িয়ে মেয়াদ ফুরনোর আগেই গত বছর ডেপুটি গভর্নরের পদ ছাড়েন বিরল। ঠিক যে ভাবে মেয়াদ শেষের আগে সরেছিলেন প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেল বা প্রথম দফার মেয়াদ শেষেই রঘুরাম রাজন।
তবে বিদেশে পড়াতে গেলেও, এই সংঘাতের কারণ খুঁজে বার করার লক্ষ্য থেকে যে তিনি সরেননি তা নিজেই জানিয়েছেন বিরল। বলেছেন, ‘‘প্রাক্তন গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে কথা বলে এর যে ব্যাখ্যা পেয়েছি, তাতে মনে হয়েছে, অতীতে কেন্দ্র, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিলে কিছুটা ‘অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের’ মতো অর্থনীতি সামলাত। ফলে বিভিন্ন পক্ষের চাহিদা ও মতের সমন্বয় সহজ হত। কিন্তু যে দিন থেকে ভারত বাজার নির্ভর হওয়ার পথে হেঁটেছে, তখন থেকে বেসরকারি শিল্প দেশের ভিতরে ও বাইরে থেকে মূলধন জোগাড় শুরু করেছে। ফলে এখন আর আগের মতো ততটা সহজে সব পক্ষের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।
আচার্যের মতে, তার উপরে নামছে বৃদ্ধির হার। অর্থনীতিকে আঁটোসাঁটো করা যায়নি। লক্ষ্যের মধ্যে থাকছে না রাজকোষ ঘাটতি। এক দশক ধরে কমছে গৃহস্থের সঞ্চয়ও। এটাই চাপ বাড়াচ্ছে, কারণ কেন্দ্রকে ধার করতে ও খরচ কমাতে হচ্ছে। ফলে অতীতের ব্যবস্থা কাজে দিচ্ছে না। সরকার চাইছে যে ভাবে হোক সাহায্য করুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যা তাদের মধ্যে চাপান-উতোর বাড়াচ্ছে। বিরল বলেছেন, ভবিষ্যতে দেশের কাজে লাগতে তৈরি তিনি।
অনেকের মতে, এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ।