নরেন্দ্র মোদী।— ফাইল চিত্র
লগ্নির রাস্তা মসৃণ করে বৃদ্ধির হারে গতি ফেরাতেই কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে বললেন, কর-সন্ত্রাসের সমস্যা পেরিয়ে কর-ব্যবস্থা স্বচ্ছ হয়েছে তাঁর জমানায়। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, কর্পোরেট কর আদায়ে ওই বিপুল অঙ্কের ক্ষতি স্বীকারের পরেও বেসরকারি লগ্নির দেখা মিলেছে কই? বরং সেই টাকা বিশেষত অতিমারির সময়ে সাধারণ মানুষের হাতে যাওয়া উচিত ছিল বলে বার বার অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতারা।
বুধবার এক ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে ওড়িশার কটকে আয়কর আপিল আদালতের দফতর এবং কর্মীদের থাকার জায়গার উদ্বোধন করেন মোদী। সেখানে তিনি বলেন, “…বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত করতে এবং এ দেশে লগ্নির রাস্তা মসৃণ করার লক্ষ্যেই কর্পোরেট কর ছাঁটাইয়ের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।” তাঁর দাবি, ওই কর ৩০% থেকে ২২% করায় এ দেশে টাকা ঢালতে আগ্রহী হবে বহু সংস্থা। তাদের কল-কারখানায় তৈরি হবে কাজে। নতুন কারখানায় কর্পোরেট কর ১৫% রাখা হয়েছে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ তৈরির লক্ষ্যে। তাঁর দাবি, ‘‘অতীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে মানুষ কর-সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ জানাত। সেই জমানাকে পিছনে ফেলে আমরা এগোচ্ছি কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করার দিকে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, কর কমানোয় কেন্দ্রের যে বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তা গিয়েছে শিল্পপতিদের পকেটে। অথচ অধরা বেসরকারি লগ্নি। বিদেশি লগ্নি এলেও, তা গিয়েছে মূলত ভারতের বিভিন্ন সংস্থার অংশীদারি কিনতে। অর্থাৎ, তার দৌলতে নতুন কারখানা বা কাজ তৈরি হয়নি। বেকারত্বের হার চড়া। বৃদ্ধির হার শূন্যেরও অনেক নীচে। রাহুল বহু বার বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী শিল্পপতিদের করছাড়ের সুবিধা দিয়েছেন। কিন্তু অতিমারির এমন ভয়ঙ্কর সময়েও কাজ হারানো কর্মী, দরিদ্রদের হাতে ন্যূনতম নগদটুকু দেননি।” সেই সঙ্গে প্রশ্ন, কর-সন্ত্রাস থেকে মুক্তিতে স্বস্তির প্রতিফলন লগ্নির হিসেবে কোথায়?
মোদীর অবশ্য দাবি, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হওয়ায় সুবিধা হয়েছে সাধারণ মানুষেরই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কর সংগ্রহের সময় আধিকারিকদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে আমজনতার হয়রানি না-হয়। সেই সঙ্গে, করের টাকা কী ভাবে (বা কাজে) ব্যবহৃত হচ্ছে, তার প্রভাবও অনুভব করা উচিত মানুষের।’’ অর্থাৎ, করদাতারা যদি জানেন তাঁর টাকা দেশ গড়ার কাজে কী ভাবে ব্যয় হচ্ছে, তা হলে আরও কর দেবেন, দাবি প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু বেকারত্বের চড়া হার মনে করিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, আগে আয়ের বন্দোবস্ত হলে, তবে না কর জমায় উৎসাহিত হওয়ার প্রশ্ন।
এ দিকে, এই দিনই অর্থ মন্ত্রক বলেছে, পরিচয় না-জেনে কর বিরোধ মেটানোর সুবিধা মিলবে না প্রতারণা, বড় অঙ্কের কর ফাঁকি, বিশেষত কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায়, বেনামি সম্পত্তি ও আন্তর্জাতিক করে।