—প্রতীকী ছবি।
মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের প্রথাগত সঞ্চয়ের দিক থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়েছে আমজনতা। একটু বেশি রিটার্নের আশায় মিউচুয়াল ফান্ড বা স্টকে বিনিয়োগ করছেন তাঁরা। কিন্তু, তার পরও এ দেশে বজায় রয়েছে প্রথাগত সঞ্চয়ের সংস্কৃতি। এই দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত, যাকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)।
সম্প্রতি নাগরিকদের সঞ্চয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। সেখানে বলা হয়েছে, এ দেশে প্রথাগত সঞ্চয়ের হার ৩০.২ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী এর গড় ২৮.২ শতাংশ হওয়ায় তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। তালিকায় প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে চিন, ইন্দোনেশিয়া এবং রাশিয়া। এই দেশগুলির নাগরিকদের প্রথাগত সঞ্চয়ের পরিমাণ ৪৬.৬, ৩৮.১ এবং ৩১.৭ শতাংশ।
স্টেট ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এ দেশে সঞ্চয়ের অভ্যাসের ক্ষেত্রে বড় রকমের বিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ মানুষ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করছেন। ২০১১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ। জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যে আর্থিক সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন বা নিতে চাইছেন, এটাই তার প্রমাণ।
তবে ঝুঁকি আছে জেনেও বেশি লাভের আশায় মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এসবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে (এসআইপি) বিনিয়োগ ২০১৮ সালের তুলনায় বেড়েছে চার গুণ। বর্তমানে এসআইপি অ্যাকাউন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.৮ কোটি। পাশাপাশি বেড়েছে স্টকে লগ্নিও। এক দশক আগে ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপিতে শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের অবদান ছিল ০.২ শতাংশ। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-’২৫) তা বেড়ে এক শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয়দের নেট আর্থিক সঞ্চয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গার্হস্থ্য সঞ্চয়ের যে অংশটি আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়, সেটি এর অন্তর্ভুক্ত। ২০১৪ আর্থিক বছরে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৩৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবর্ষে সেই অঙ্ক বেড়ে ৫১ শতাংশে পৌঁছে যায়। তবে ২০২২ এবং ২০২৩ আর্থিক বছরে এই সঞ্চয়ের পরিমাণ সামান্য কমেছে বলে জানিয়েছে এসবিআই।
২০২০-’২১ সালে মোট আর্থিক সঞ্চয়ের ৪৭.৬ শতাংশ ছিল ব্যাঙ্ক আমানত। এর মধ্যে স্থায়ী আমানত এবং রেকারিং ডিপোজ়িট রয়েছে। কিন্তু, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কে রাখা মোট আর্থিক সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৪৫.২ শতাংশ। প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং স্বল্প সঞ্চয়ে সঞ্চয়ের পরিমাণ ১২.৬ শতাংশ থেকে ১৩.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আমজনতার বাড়ি ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির কেনাক দিকে ঝোঁক বাড়ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক।