প্রতীকী ছবি
খারাপ খবরের শেষ নেই। করোনার ধাক্কায় সারা বিশ্বেই জেঁকে বসছে মন্দার সম্ভাবনা। জাপান, জার্মানি থেকে শুরু ব্রিটেন, আমেরিকা— সঙ্কুচিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। কাজ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এ দিকে, হাতে এখনও কোভিড-১৯-এর কোনও প্রতিষেধক আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তার উপরে করোনা, হংকং-সহ নানা বিষয়ে তিক্ত হচ্ছে আমেরিকা-চিন সম্পর্ক। ভারতেও লকডাউন যত শিথিল হচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে ততটাই দ্রুত। এর মধ্যে শুক্রবার খবর এল, ২০১৯-২০ সালে ভারতের জিডিপি বেড়েছে ৪.২%। যা ২০০৮ সালের মন্দার পরে সব চেয়ে কম। আর শুধু জানুয়ারি-মার্চেই বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩.১ শতাংশে। ৪০টি ত্রৈমাসিকে সর্বনিম্ন। মার্চের মাত্র শেষ সাতটি দিন পড়েছিল লকডাউনের কবলে। অর্থাৎ, পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে, অর্থনীতি ধুঁকছিল তার আগে থেকেই। তা সত্ত্বেও গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে সেনসেক্স বেড়েছে ১৮১৫ পয়েন্ট (জিডিপির পরিসংখ্যান অবশ্য শুক্রবার বাজার বন্ধের পরে প্রকাশিত হয়েছে)। পৌঁছেছে ৩২,৪২৪ অঙ্কে।
প্রশ্ন হল এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, পর পর তিন দিন বাজার এতটা উঠল কেন। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে—
• লকডাউন শিথিল হয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই শুরু হওয়া। আগামী দিনে আরও শর্ত শিথিলের আশা (১ জুন থেকে যা হবে বলে শনিবার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র)।
• বাজারের মতে, কাজকর্ম স্বাভাবিক হলে শেয়ারের দাম বাড়বে। তা মাথায় রেখে সস্তায় শেয়ার কেনার প্রবণতা।
• ব্যাঙ্ক, ডাকঘর-সহ বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ অনেকটা কমে আসায় শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নির আগ্রহ বৃদ্ধি।
তবে সূচকের এই উত্থানে ততটা খুশির কারণ দেখছেন না অনেক বিশেষজ্ঞই। তাঁদের মতে, অনেকে শেয়ার কিনছেন স্বল্প মেয়াদে লাভ ঘরে তোলার লক্ষ্যে। তাঁরা শেয়ার বেচলে বাজার পড়বে। তার উপরে আগামী দিনে বর্ষা, অর্থনীতির হালও সূচকের গতি ঠিক করবে। আবার বিশ্ব অর্থনীতি ও মার্কিন-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন দিকে গড়ায়, তার দিকেও নজর থাকবে বাজারের। ফলে এই অবস্থায় পা ফেলতে হবে সতর্ক হয়েই।
এ কথা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য সাধারণ লগ্নিকারীদের জন্য। কারণ, জমায় সুদ কমেই চলেছে ব্যাঙ্ক, স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। গত সপ্তাহেই আমানতে সুদ কমিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। সব থেকে কম মেয়াদের সুদ নেমেছে ৩ শতাংশের নীচে। অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলি একই পথে হাঁটবে বলে ধারণা।
তার উপরে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ করা হয়েছে ভারত সরকারের ৭.৭৫% সুদের করযোগ্য বন্ড। এই প্রকল্প বহু মানুষকে আকর্ষণ করছিল। ফলে যাঁরা তুলনায় কম ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন, তাঁদের অনেকের মধ্যেই এখন সঞ্চয়ের কিছুটা শেয়ারে বা ফান্ডে সরানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সে বিষয়ে ভাল করে জানা না-থাকলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই বাজারে পা রাখার আগে তৈরি করে নিতে হবে নিজেকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন: ‘স্বর্ণযুগ’-এর বছরে কোন দিশায় অর্থনীতি?