ফাইল চিত্র।
অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে রাজ্যে রাজ্যে চলছে বিধিনিষেধ এবং স্থানীয় লকডাউন। যার জেরে ফের ধাক্কা খেয়েছে শিল্প ও কর্মসংস্থান। অর্থনীতির পরিস্থিতি সুবিধের নয় মোটেই। অথচ এরই মধ্যে শেয়ার বাজারে বিদ্যুতের গতি!
অবস্থা যতই নেতিবাচক হোক না কেন, ভারতে দুই সূচক উঠেই চলেছে। গত সপ্তাহে সেনসেক্স ৮৮৩ পয়েন্ট বেড়ে পৌঁছেছে ৫১,৪২২.৮৮ অঙ্কে। যা এই সূচকের সর্বকালীন উচ্চতার (৫২,১৫৪.১৩) থেকে মাত্র ৭৩১ পয়েন্ট কম। পাশাপাশি, নতুন নজির গড়েছে নিফ্টি। সপ্তাহের শেষে সেই সূচক পৌঁছেছে ১৫,৪৩৫.৬৫ পয়েন্টে। যা তার সর্বকালীন রেকর্ড। চতুর্দিকে লকডাউন এবং হরেক বিধিনিষেধের মধ্যেও সূচকের এই উত্থানে উদ্বিগ্ন অনেকেই। কারণ, নতুন অর্থবর্ষের গোড়াতেই অর্থনীতি যে ব্যাকফুটে তা মানছেন সকলেই। বলছেন, প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে শেয়ার বাজারের এই উত্থান মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তা হলে কেন বাড়ছে সূচক? সব দিক বিশ্লেষণ করে যে সব কারণ উঠে আসছে তা মোটামুটি এই রকম:
নানা রাজ্যে সংক্রমণ কমায় শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। শুরু হতে চলেছে বন্ধ থাকা অনেক শিল্পে উৎপাদন।
প্রতিষেধক কর্মসূচির গতি মন্থর হলেও আশা, আগামী দিনে তার গতি বাড়বে। সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হবে। বাস্তবে সেটা কতটা সম্ভব তা নিয়ে অবশ্য সংশয় আছে।
বাজারের আশা, সরকার নতুন ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করবে।
সংক্রমণ কমায় ও জনসংখ্যার বড় অংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ায় হাল ফিরছে পশ্চিমের দুনিয়ার অর্থনীতির। ফলে সেখানে রফতানি বাড়ছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, দেশ এ বারেও স্বাভাবিক বর্ষা পাবে।
এখনও বিদেশি লগ্নি বজায় থাকা।
শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
তা সত্ত্বেও সূচকের এই উত্থানকে অনেকেই যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন না। তাঁদের ধারণা, অর্থনীতির নেতিবাচক দিকগুলি এই ভাবে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। যদিও বলা হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত বছরের তুলনায় লোকসান কম হবে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, এ বারেও কাজ হারিয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। বন্ধ হয়েছে বহু ছোট ও মাঝারি সংস্থা। দারিদ্র অনেকটাই বেড়েছে। ফলে টান পড়ছে চাহিদায়। শিল্পপতি এবং অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, হাল ফেরানোর জন্য সরকারের উচিত এখনই গরিব মানুষের অ্যাকাউন্টে নগদ পাঠানো। প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়েও। নীচের তলায় টাকা পৌঁছলে পণ্যের চাহিদা বাড়বে। তা শিল্পের পক্ষেও সহায়ক হবে।
গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সংস্থাগুলির আর্থিক ফল মোটের উপরে ভাল হলেও, চলতি ত্রৈমাসিকে তা হওয়ার আশা কম। টিকাকরণ ভাল জায়গায় না-পৌঁছলে ঘোর বিপদ। এই কারণে লাভের সুযোগ দেখলে, শেয়ার বেচাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি, সাবধান থাকতে হবে নতুন লগ্নির ব্যাপারে। উল্লেখ্য, মে মাসে বিদেশি লগ্নিকারীরাও বাজার থেকে নিট ১৭৩০ কোটি টাকার পুঁজি তুলেছেন। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ২-৪ জুন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক হবে। তার সিদ্ধান্তের উপরেও বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে।
এরই মধ্যে খবর, দেশের বৃহত্তম আইপিও (বাজারে প্রথম শেয়ার) আনার পথে এগোচ্ছে পেটিএম। যার আকার ৩০০ কোটি ডলার বা প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা। ২০১০ সালে কোল ইন্ডিয়ার আইপিও-র অঙ্ক ছিল ১৫,২০০ কোটি। চলতি অর্থবর্ষের মাঝামাঝি আসতে পারে এই ইসু।
(মতামত ব্যক্তিগত)