প্রতীকী ছবি।
আন্তর্জাতিক শ্রম বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে ভাবে ভারতে শ্রম আইন বদল এবং শিথিলের পথে হাঁটছে বিভিন্ন রাজ্য, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ দেশের দশ ট্রেড ইউনিয়নকে লেখা চিঠিতে জানাল, ওই বিধি যাতে কোনও মতেই ক্ষুণ্ণ না-হয়, তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় এবং সমস্ত রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর আর্জি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছে তারা। এরই মধ্যে অবশ্য কারখানায় দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার নির্দেশিকা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজস্থান।
১৪ মে আইএলও-কে চিঠি পাঠিয়েছিল এআইটিইউসি, সিটু, ইউটিইউসি-সহ দশ কর্মী সংগঠন। মূল অভিযোগ ছিল, করোনা এবং লকডাউনের জেরে এমনিতেই ভারতে বহু শ্রমিকের জীবিকা সঙ্কটে। এই পরিস্থিতিতেও অনেক শ্রম আইন বাতিল কিংবা শিথিলের পথে হাঁটছে উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য। যেমন, আট রাজ্য দৈনিক কাজের সময় আপাতত ৮ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টা করার কথা বলছে। শুধুমাত্র লগ্নিকারীর স্বার্থে, কোনও আলোচনা ছাড়াই আগামী তিন বছরের জন্য বিভিন্ন শ্রম আইন শিকেয় তুলে দেওয়ার কথা বলছে বিভিন্ন রাজ্য। এ বিষয়ে মুখে কুলুপ কেন্দ্রেরও। ইউনিয়নগুলির মতে, এতে শ্রমিক-স্বার্থ তো ক্ষুণ্ণ হচ্ছেই, ভঙ্গ হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রম বিধিও।
চিঠির উত্তরে আইএলও জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যাতে একতরফা ভাবে নেওয়া ওই সমস্ত সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক শ্রম বিধি লঙ্ঘিত না-হয়, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি জানিয়েছেন আইএলও-র ডিরেক্টর গায় রাইডার।
সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের কথায়, ‘‘ভারত আইএলও-র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সদস্য গভর্নিং বডিরও। তা সত্ত্বেও এ ভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম বিধি লঙ্ঘন লজ্জাজনক।’’ ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘আইএলও-র প্রথম কথাই হল, সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের মতামত নিয়ে তবেই শ্রম-নির্দেশিকা জারি করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে ভাবে একতরফা শ্রম আইন বদলের কথা বলা হয়েছে, তা ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির পক্ষে আদৌ ভাল কি? সারা পৃথিবীতেই তো করোনার জেরে ধাক্কা খেয়েছে অর্থনীতি। তা হলে কাজের সময় বাড়ানোর কথা আর কোনও দেশ বলেনি কেন?’’ তাঁর আশঙ্কা, এর পিছনে পরোক্ষ মদত রয়েছে কেন্দ্রেরও।
এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউর জানান, ২২ মে আইএলও-র কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পরে সোমবার ফের তাদের চিঠি দিয়েছে দশটি ট্রেড ইউনিয়ন। কোন-কোন রাজ্য কোন-কোন ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে আইন বদলের কথা বলেছে, তা আলাদা-আলাদা ভাবে লেখা হয়েছে সেখানে। প্রশ্ন তোলা হয়েছে কেন্দ্রের প্রস্তাবিত শ্রম আইন সংশোধন নিয়েও। আগামী দিনে আইএলও-র চাপ বজায় থাকলে, কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি অন্তত কিছুটা নড়ে বসতে বাধ্য হবে বলে তাঁদের আশা।