তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মধ্যে শেয়ার বাজারের ভাগ্যবিধাতা যদি কেউ থেকে থাকেন, তবে তাঁর মন্দিরে ভক্তদের ধর্না নিশ্চয় এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি পর্যালোচনার দিন। শিল্প এবং শেয়ার বাজার পুজো দিচ্ছে যাতে সুদ এ বার অবশ্যই কমে। যদিও সুদ-নির্ভর গৃহস্থ এতে রোজগার কমে যাওয়ার আভাস পাচ্ছেন।
সুদ কমলে শিল্পে হয়তো সুদিন ফিরলেও ফিরতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তার সুফল কতটা পৌঁছবে সাধারণ মানুষের ঘরে। জমার উপর সুদ কমলে আয় কমা কিন্তু এক রকম নিশ্চিত। সরকারি হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি পিছু হটলেও বাজারে তার কতটা প্রতিফলন আছে? জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি নাকি চিনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। কোম্পানি ফলাফল দেখে সত্যিই কি তাই মনে হয়?
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত একগুচ্ছ ফলাফল। না, শেষ রাতে ওস্তাদের মার এ বার আদৌ দেখা যায়নি। খারাপের পাল্লাটাই বেশি ভারী। বছরের শেষ তিন মাসে এনটিপিসি-র লাভ কমেছে ৫%। গোটা বছরে লাভ কমেছে ১,৪১৮ কোটি টাকা। আয় ও লাভ দুই-ই ভাল রকম কমেছে ইন্ডিয়ান অয়েলের। একই অবস্থা স্টিল অথরিটির। শেষ তিন মাস এবং গোটা বছর, দুই মেয়াদেই লাভ কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি-র। অনুৎপাদক সম্পদ ভাল রকম বেড়ে ওঠায় লোকসানের জগতে পৌঁছেছে সরকারি ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সরকারি সংস্থাগুলি বেশ খারাপই করেছে বলতে হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে মুনাফা কমেছে সান ফার্মা-র। তবে ৪৮% লাভ বাড়াতে পেরেছে বাটা ইন্ডিয়া। বহু দিন পরে লাভের মুখ দেখেছে স্পাইসজেটও। লাভ বেড়েছে বার্জার পেন্টস-এর। ইস্ট ইন্ডিয়া হোটেলস-এর লাভ ৩২% বেড়েছে। অন্য দিকে টাটা গোষ্ঠীর ইন্ডিয়ান হোটেলস-এর লোকসান হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। একদম শেষ বেলায় বাজারে বড় ধাক্কা দিয়েছে এলঅ্যান্ডটি। বছরের শেষ তিন মাসে সংস্থাটির আয় ১,০০০ কোটি টাকা বেড়ে ২৮,০০০ কোটি ছাড়ালেও নিট লাভ ২,৮৪০ কোটি টাকা থেকে নেমেছে ২,০৬৯ কোটিতে। ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে অবশ্য কোম্পানির নতুন বরাত বেড়েছে ২২%, যার পরিমাণ ১,৫৫,৩৬৭ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে দেখলে চতুর্থ ত্রৈমাসিক ফলাফল তেমন উৎসাহজনক নয়। এই কারণেই শিল্প চাইছে সুদ কমুক। তাদের উপর সুদের বোঝা লাঘব হোক। সুদ কমার আশায় শুক্রবারই শেয়ার বাজারে চাঙ্গা ভাব দেখা গিয়েছে। মঙ্গলবার রঘুরাম রাজন যদি সেই খুশির খবরই ঘোষণা করেন, তবে বাজার হয়তো আরও উঠবে। না-হলে কিন্তু সেনসেক্স ৩০০ থেকে ৫০০ অঙ্ক পিছু হটতে পারে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-’১৫ সালে ভারতের জাতীয় আয় বেড়েছে ৭.৩% হারে। শুনতে ভাল লাগলেও বাস্তবে তার তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি। ভিন্ন পদ্ধতিতে নির্ধারিত এই পরিসংখ্যান অবশ্য মোদী-জেটলিকে নতুন হাতিয়ার দেবে প্রথম বছরের সাফল্যের প্রচারে। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল, কৃষিতে ০.২% বৃদ্ধি— যা আগের বছর ছিল ৩.৭%। যে কারণে খাদ্যপণ্যের এত দাম। এর পর যদি বৃষ্টি কম হয়, তবে ‘আচ্ছে দিন’ দৃষ্টির বাইরে চলে যেতে পারে। বাজারের কাছেও এটি চিন্তার কারণ। গত বছর ভাল এগিয়েছে (১১.৫%) আর্থিক পরিষেবা, নির্মাণ ক্ষেত্র। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়িয়েছে ৭%।
জাতীয় আয় ৭.৩% বাড়লেও আজ সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়ার দিন। আজ থেকে চালু হচ্ছে নতুন পরিষেবা কর। আগের ১২.৩৬ শতাংশের জায়গায় ১৪% হারে। ধনী-দরিদ্র কেউই রেহাই পাবেন না বর্ধিত এই কর থেকে। অধিকাংশ পরিষেবা এখন এই করের আওতায়। অর্থাৎ আজ থেকে রেস্তোরাঁয় খেলে, ট্রেনের টিকিট কাটলে বিমার প্রিমিয়াম মেটালে, ফোনের বিল ইত্যাদির উপর পরিষেবা কর দিতে হবে বর্ধিত হারে। ট্রেন টিকিটের ক্ষেত্রে পরিষেবা কর দিতে হবে শুধু মাত্র এসি ও প্রথম শ্রেণির টিকিটে। তাও ধার্য হবে টিকিটের ৩০% দামের উপর। অর্থাৎ হার দাঁড়াবে ৪.২%। আগের তুলনায় বাড়বে ০.৫%। ২% ‘স্বচ্ছ ভারত’ সেস অবশ্য এখনই চালু করা হচ্ছে না। বর্ধিত পরিষেবা করে মানুষ একটু ধাতস্থ হলে তবেই চাপবে এই নতুন শুল্ক।