ফাইল চিত্র।
বাজারে এখন আর গোলাপি রঙের দু’হাজার টাকার নোটের দেখা মেলে না। তবে পার্থ-কাণ্ডে ইডি-র তল্লাশিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে রাশি রাশি গোলাপি নোট মিলছে!
ফ্ল্যাটবন্দি ওই কোটি কোটি টাকার দু’হাজারি নোট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দি নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের কর্তারাও মানছেন, দু’হাজার টাকার নোট যে আর্থিক লেনদেন চালানোর তুলনায় কালো টাকা মজুত করতে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই সন্দেহ দৃঢ় হল কলকাতায় ইডি-র তল্লাশির পরে। কারণ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টেই জানানো হয়েছিল, বাজারে ওই নোটের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। নতুন ছাপানো হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু বাজারে তার সংখ্যা কমতে থাকা মানে, তা কালো টাকা হিসেবে মজুত করা হচ্ছে। কারণ অর্থমূল্য বেশি বলে কম সংখ্যক দু’হাজার টাকার নোটে অনেক বেশি অর্থ জমানো সহজ।
২০১৬ সালের নভেম্বরে আচমকাই মোদী পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন, জাল নোট ও কালো টাকা মুছে ফেলা, দুর্নীতি, সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ করা, ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য। বিরোধীদের বক্তব্য, তার পরেই বাজারে নগদের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় তড়িঘড়ি দু’হাজার টাকার গোলাপি নোট ছাড়া হয়। কিন্তু তার ঠেলায় কালো টাকা জমানো আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, নোটবন্দি সত্যিই সফল হলে ইডি-র তল্লাশিতে এত কালো টাকা উদ্ধার হচ্ছে কী ভাবে?
অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-এর পরে আর নতুন করে দু’হাজার টাকা ছাপা হয়নি। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-র মার্চের শেষে বাজারে সেই নোটের সংখ্যা ছিল ২৭৪ কোটি। ২০২১ সালের মার্চে তা নামে ২৪৫ কোটিতে। গত মার্চের শেষে দাঁড়ায় ২১৪ কোটি। অথচ দু’হাজার টাকার নোট বাজারে আসার পরে ২০১৮ সালের মার্চের শেষে তার সংখ্যা ছিল ৩৩৬ কোটির বেশি। এখন প্রশ্ন হল, ১৩২ কোটি সংখ্যক গোলাপি নোট গেল কোথায়?
এর উত্তর অর্থ মন্ত্রক বা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে নেই। রাজস্ব গোয়েন্দারা মনে করছেন, সিংহভাগই সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকা হিসেবে রয়েছে। মূলত কালো টাকা নগদে ধরে রাখতেই দু’হাজার টাকার নোট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর বা অন্যান্য সংস্থার তল্লাশিতে তা ধরা পড়ছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আসলে কালো আয় এবং কালো টাকার মধ্যে ফারাক রয়েছে। বেআইনি পথে আয় বা কালো আয়ের সামান্য অংশ নগদে বা কালো টাকায় ধরা থাকে। বাকি কালো আয় ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে বিদেশে করফাঁকির স্বর্গরাজ্যে পাচার হয়ে যায় কিংবা বেনামে জমি, সোনা কিনে রাখা হয়। নোটবন্দি করে এই কালো টাকা দূর করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু লাগাতার কালো আয় তৈরির পথ বন্ধ হয়নি। ফলে আবার কালো টাকা তৈরি হয়েছে। তা সে সরকারি প্রকল্পের কাটমানি হোক বা সরকারি বরাত, চাকরি পাইয়ে দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে।’’
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, বাজারে দু’হাজার টাকার সংখ্যা কমলেও নোটবন্দির ফলে নগদের পরিমাণ বিশেষ কমেনি। বরং কোভিডের সময় যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছে। কারণ আতঙ্কিত মানুষের মধ্যে নগদে টাকা সঞ্চয়ের প্রবণতা বেড়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে থেকে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির নেতা ই ভি রেড্ডির বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের কোনও লক্ষ্যই যে পূরণ হয়নি, তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। উল্টো দিকে বিজেপির উত্তরপ্রদেশের নেতা দীনেশ প্রতাপ সিংহের মন্তব্য, ‘‘নিজেদের দলে দুর্নীতি রয়েছে বলেই রাহুল গান্ধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোটবন্দির পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন।’’